৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের বিরুদ্ধে।
Published : 05 Feb 2025, 05:40 PM
মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের জানান, শিবলী ছাড়াও পাঁচজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তারা হলেন– মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, ব্যাংকটির এসইভিপি, অডিট অ্যান্ড ইনসপেকশন ডিপার্টমেন্ট ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। তার পরদিনই তার বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানাল দুদক।
মামলার এজাহারে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা দেখিয়ে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ইউএস ডলার এবং ভুয়া পণ্য বিক্রির চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানির কৌশলে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকাসহ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শিবলী ২০২০ সালে ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ের মধ্যেই তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যুক্তরাষ্ট্রের মোনার্ক হোল্ডিং ইনক থেকে অর্থ আসে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
২০২০ সালের জুলাই মাসে সাউথইস্ট ব্যাংকে তার ওই অ্যাকাউন্টে মোনার্কের ব্যাংক হিসাব থেকে চারটি ট্রানজেকশনে মোট এক কোটি ৯২ লাখ টাকা জমা হয়। শিবলী ২০২০ সালের ১৩ জুলাই ওই অর্থ উত্তোলন করেন। ব্যাংকের রেমিট্যান্স ঘোষণা ফরমে তিনি ওই অর্থকে পারিবারিক খরচ ঘোষণা করেন।
আসলে ওই অর্থ ‘ঘুষ’ ছিল দাবি করে এজাহারে বলা হয়েছে, “গৃহীত ঘুষকে বৈধতা প্রদানে জন্য আসামি জাভেদ এ মতিনের সাথে একটি ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তি করেন শিবলী। পরে আসামি শিবলী রুবাইয়াত- উল-ইসলাম অপর আসামি জাভেদ এ মতিন গং দের নামে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ২০২১ সালের ডিসেম্বর ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স প্রদান করেন।
“এছাড়া আসামি মো. আরিফুল ইসলামের ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স নামীয় ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ১, কলমা, সাভার (শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের একটি বাড়ি) এই ঠিকানায় নিজ নামে ব্যবসার অনুমোদন গ্রহণ করেন। ঝিন বাংলা ফ্রেব্রিক্স নামীয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হিসাব পরিচালনাকারী অপর আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।”
এজাহারে বলা হয়, ঝিন বাংলা ফেব্রিকস ২০২০ সালে জুলাই মাসে মোনার্ক হোল্ডিংস ইনকের সঙ্গে চুক্তি করে। যেখানে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শিপমেন্টে ১ লাখ ৪৫ হাজার ইউএসডি এবং ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের শিপমেন্টে ২ লাখ ১৬ হাজার ইউএসডি মূল্যের পণ্য রপ্তানির কথা বলা হয়।
“ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি দিলকুশা শাখার ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৭ জুলাই ২ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার ও ২০ জুলাই ১ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলারসহ মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার বা প্রায় ৩ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়।
“ওই সময় ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স (২০২০ সনের) ব্যতীত এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, রপ্তানি নিবন্ধন প্রত্যয়ন পত্র, আমদানি নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র, বিজিএমইএ সদস্য সনদ, পরিবেশ ছাড়পত্র, বন্ডেড ওয়ার হাউজের অনুমোদন ছিল না। অর্থাৎ পণ্য রপ্তানি করার কোনো বৈধ কাগজপত্র ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের ছিল না।”
দুদকের ভাষ্য, ওই সময়ে ঝিন বাংলায় পণ্য উৎপাদনের কোনো তথ্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কিংবা রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় মেলেনি। আসলে ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স শিবলীর একটি শেল কোম্পানি এবং ২০২০ সালের পণ্য বিক্রির চুক্তিটি ছিল লোক দেখানো।
এজাহারে দুদক বলেছে, শিবলী তার নিয়ন্ত্রণাধীন শেল কোম্পানির (জিন বাংলা ফেব্রিক্স) ব্যাংক হিসাবে পাওয়া অর্থ থেকে ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৯৬ টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যয় দেখান। ওই জমা অর্থ থেকে বিভিন্ন সময়ে তিনি তার বাহক জনৈক দেলোয়ারের মাধ্যমে নগদে প্রায় ৯৫ লাখ ২ হাজার ৫২৪ টাকা তুলেছেন।
অর্থাৎ কোম্পানির হিসাবে আসা ৩ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকার মধ্যে তিনি ঋণ পরিশোধ ও নগদ হিসেবে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা নিয়েছে, যা আসলে ছিল মোনার্ককে অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার ‘ঘুষ’।
“বাকি টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্র হতে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ প্রেরণকারী আসামি জাবেদ এ মতিনের বাংলাদেশি মার্চেন্ট ব্যাংকিং হিসাবসহ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জমা নিশ্চিত করেন,” বলছে দুদক।
গত ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতকে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত সাধারণ বীমা করপোরেশনেরও (এসবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। সম্প্রতি তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর আগে গেল ৯ অক্টোবর দুদকের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
ধানমন্ডি থেকে আটক শিবলী রুবাইয়াত