ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ তুলতে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করা হবে, বলেছেন পিবিআই এর এক পুলিশ সুপার।
Published : 27 Mar 2024, 11:51 PM
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান ও তার ছেলেসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ভাইকে হত্যার অভিযোগে করা মামলার তদন্তেরও দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট তদন্ত শুরুর অংশ হিসেবে সিমিন রহমান ও মামলার বাদী শাযরেহ হকের ভাই ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের লাশের ময়নাতদন্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এজন্য ১০ মাস আগে নিজ বাসায় মারা যাওয়া আরশাদের লাশ বনানী কবরস্থান থেকে তুলতে একজন ম্যাজিস্টেট চেয়ে আদালতে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন পিবিআই ঢাকা উত্তরের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।
সিমিন ও শাযরেহ হকের বড় ভাই আরশাদের লাশ কবর থেকে তুলতে আদালতের অনুমতি পাওয়ার তথ্যও দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বুধবার রাতে পিবিআই এর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, এ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব তার ইউনিট পেয়েছে। এটির তদন্তও করবেন এ মামলার বাদীর দায়ের করা আগের তিনটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সিমিন রহমানের ছোট বোন শাযরেহ হক ভাই হত্যার অভিযোগে গত ২১ মার্চ গুলশান থানায় এ মামলা দায়ের করার আগে আরও তিনটি মামলা করেছেন। সেগুলোতে অর্থ আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল ও অবৈধভাবে শেয়ার হস্তান্তরের অভিযোগ আনেন, যেখানে আসামি করা হয়েছে তার মা, বোন, ভাগ্নেসহ আটজনকে।
গ্রুপের ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল এবং অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর করার অভিযোগ এনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় এসব মামলা দায়ের করা হয়।
এ তিন মামলার সূত্র ধরে পিবিআই এরই মধ্যে ট্রান্সকম গ্রুপের গুলশানের হেড অফিস থেকে বেশ কিছু নথি জব্দ করেছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ট্রান্সকমের পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রথমে জামিন দেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করা হয়।
সবশেষ গত ২১ মার্চ রাতে ১০ মাস আগে ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় বড় বোন সিমিন ও তার ছেলে ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব ট্রান্সফরেশন যারাইফ আয়াত হোসেনসহ ১১ জনকে আসামী করে মামলা করেন শাযরেহ হক।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হত্যা মামলাটি এখন আর তাদের কাছে নেই। মঙ্গলবার পিবিআইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৬ জুন ঢাকার গুলশানের বাসায় নিজের শোয়ার ঘরে সিমিন রহমান ও শাযরেহ হকের একমাত্র ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে জানান।
ট্রান্সকমের সিমিনের বিরুদ্ধে ভাই হত্যার অভিযোগে বোন শাযরেহের মামলা
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এর আগেও শাযরেহ হক তার মা, বোন, ভাগ্নেদের বিরুদ্ধে পরপর তিনটি মামলা করে আলোচনায় আসেন। শাযরেহ হকের দাবি তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ভাই হত্যা মামলার আসামীরা হচ্ছেন- ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান (৫৭), সিমিনের ছেলে ও ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব ট্রান্সফরেশন যারাইফ আয়াত হোসেন (২৯), এসকেএফ ফার্মাসিটিউক্যাল লিমিটেডের ম্যানেজার (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. মুরাদ (৫০), এসকেএফ ফার্মাসিটিউক্যাল লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম (৫৫), ট্রান্সকম লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া (৬০), ট্রান্সকম লিমিটেডের ট্রান্সকম গ্রুপ করপোরেট ফাইন্যান্সের পরিচালক মো. কামরুল হাসান (৬১), মো. জাহিদ হোসেন (৫৫), ট্রান্সকম লিমিটেডের ম্যানেজার (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) সেলিনা সুলতানা (৪৫), ট্রান্সকম লিমিটেডের ম্যানেজার (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) কেএইচ মো. শাহাদত হোসেন (৫০), বাবুর্চি রফিক (৫৫) এবং ব্যক্তিগত চালক মিরাজুল (৪০)। এজাহারে ৭ নম্বর আসামি জাহিদ হোসেনের কোনো পরিচয় দেওয়া হয়নি।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, “পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে কৌশলে বিষ প্রয়োগ/শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে সিমিন রহমানসহ অন্যদের আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে।”
পিবিআই এর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার পর গুলশান থানা পুলিশ আরশাদের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করতে অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করে।
“আদালত অনুমতিও দিয়েছে। এরমধ্যে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে চলে আসে। আমরা এখন একজন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আদালতে আবেদন করব। আদালত যেদিন সময় দেবে সেদিন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহ উঠিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।”