মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের পটভূমিতে ২০১৬ সালে সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার বাতিল করেছিল, ওই রায়ে পুরস্কার বাতিলের কোনো কথা ছিল না।
Published : 11 Mar 2025, 03:28 PM
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতে পপসম্রাট আজম খান, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদসহ সাতজনকে এবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দিচ্ছে সরকার।
সেই সঙ্গে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত রহিত করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে এবারের পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। এবারের তালিকার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই মরণোত্তর এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
কেবল শিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে বদরুদ্দীন উমর জীবদ্দশায় এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তবে তিনি আগেই এক বিবৃতির মাধ্যমে পুরস্কার গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে এবার ‘প্রতিবাদী তারুণ্য’ নামে নতুন একটি ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ছয় বছর আগে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত বাকিরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (কবি আল মাহমুদ), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ, সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ( পপ সম্রাট আজম খান)। তারা সবাই মরণোত্তর এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা, ৩ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
জিয়ার পুরস্কার পুনর্বহাল
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৩ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশ-জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা পায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে প্রথমে উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন জিয়া। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অসীন হন। তার সময়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সময়ে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। ২০০৫ সালে মুন সিনেমা হল মামলার রায়ে হাই কোর্ট ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। পরে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে।
এরপর ২০১৬ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে জাতীয় জাদুঘর থেকে তার পদকটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়ার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের পটভূমিতে ২০১৬ সালে সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার বাতিল করে, ওই রায়ে পুরস্কার বাতিলের কোনো নির্দেশনা না থাকায় মুক্তিযুদ্ধে তার ‘অসাধারণ অবদান বিবেচনায়’ স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকার রহিত করেছে।
সিদ্ধান্তে অটল বদরুদ্দীন উমর
এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় নাম আসার খবরে বদরুদ্দীন উমর গত বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন, এ পুরস্কার নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের পাঠানো এক বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর বলেছিলেন, “১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলির কোনোটি গ্রহণ করিনি।”
“এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।"
মঙ্গলবার পুরস্কারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফয়জুল হাকিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বদরুদ্দীন উমর আগের সিদ্ধান্তেই বহাল আছেন। তিনি পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।”