নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ছয়জনকে দায়িত্বও দিয়েছেন তিনি।
Published : 11 Sep 2024, 09:22 PM
সরকারের পট পরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই খাতের সংস্কার কমিশনের প্রধান করার ঘোষণাও দেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার একমাস পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, চলতি মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
”কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিকে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ সভা করে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।”
কমিশনের প্রধান হলেন যারা
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক -সুজন এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সংস্থাপন সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আইনজীবী শাহদীন মালিককে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
৩৩ মিনিটের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ এবং জনমালিকানা ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সংস্কার ভাবনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।”
“আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা মনে করি নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
কমিশনের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে যেভাবে
ছয়টি খাতের সংস্কারে বিষয় তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এসব বিষয়ে সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে আমরা প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলি পরিচালিনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। এর পর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো।”
এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে ভাষণে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি।
”কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।”
এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে বলে তুলে ধরেন তিনি।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। সেদিনেই জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ না যেতেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নজিরবিহীন বন্যার ধাক্কা সামলাতে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। তার মধ্যেই ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস তিন দিনের মাথায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
আইন নিজের হাতে নিলে শাস্তি পেতে হবে: ইউনূস
মন খুলে আমাদের সমালোচনা করুন: প্রধান উপদেষ্টা
কারখানা খোলা রাখুন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে: শ্রমিকদের উদ্দেশে ইউনূস
সার্ক রাষ্ট্রগোষ্ঠী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি: প্রধান উপদেষ্টা