এছাড়া ১২ ব্যাংক হিসাব ও ১৪ কোম্পানিতে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 15 Apr 2025, 07:42 PM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পর এবার তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের ৩০৪ দশমিক ৫৯ একর জমি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
ফৌজিয়ার এসব জমি বান্দরবানে ইজারা নেওয়া ও বায়না করা।
বান্দরবানের জমি ছাড়াও ঢাকার গুলশানে জমিসহ একটি ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের হালিশহরে চার তলা বাসার তিন ভাগের এক ভাগ জব্দ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ১৪টি কোম্পানিতে থাকা শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এসব হিসাবে ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৫ টাকা রয়েছে। আর শেয়ারের মূল্য ৩ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ টাকা।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফৌজিয়া ইসলামের সম্পদ জব্দ এবং শেয়ার অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন সংস্থার উপপরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ।
আবেদনে বলা হয়, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৪ টাকার সম্পদ ‘অবৈধভাবে’ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, তাজুল ইসলাম ‘অবৈধভাবে’ অর্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রী ফৌজিয়ার নামে ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৪ টাকার সম্পদ অর্জনে ‘সহায়তা’ করেছেন।
এছাড়া তার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ‘সন্দেহজনক’ ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার ২০৩ টাকা জমা ও ১৩ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৫ টাকা উত্তোলনসহ ২৭ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৭৫ টাকা ‘হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করে আয়ের উৎস আড়াল করেছেন’। যে কারণে দুদক ফৌজিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
দুদক বলেছে, মামলা তদন্তকালে তার নামে ব্যাংক হিসাবগুলোতে থাকা অর্থের তথ্য পাওয়া যায়, যা তিনি যে কোনো সময় ‘হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত’ করার চেষ্টা করছেন বলে সংস্থা জানতে পেরেছে।
এর আগে রোববার সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সাড়ে নয় একর জমি ও তিনটি গাড়ি জব্দ, ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ২০ কোটি টাকা ও ১৬ কোম্পানিতে থাকা ৫ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। তার পর থেকে তাজুল ইসলামকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত অগাস্টেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ২২ জানুয়ারি তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক।
দুইজনের বিরুদ্ধে মোট ১৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ৯৪১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের টিকেটে কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে কুমিল্লা ৯ আসন (সেই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় প্রথম অন্তর্ভুক্ত হন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে গঠিত পঞ্চম মন্ত্রিসভায়ও একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।