এ দুই বিসিএসের মাঝে অনুষ্ঠিত ৪৫তম এর লিখিত পরীক্ষার খাতা নতুন করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবগঠিত পিএসসি।
Published : 18 Nov 2024, 08:16 PM
সরকারে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগে চলমান তিনটি বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবগঠিত সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি); ৪৪তমের মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, ৪৫তমের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনরায় দেখা হবে এবং ৪৬তমের প্রিলির ফল নতুন করে প্রকাশ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এর জের ধরে সরকার পতনের পর কার্যক্রম স্থগিত থাকা সবশেষ এ তিন বিসিএসের বিষয়ে সম্প্রতি এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি, যা সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
সোমবার রাতে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান ও আট সদস্যের কমিশন সম্প্রতি কয়েক দফায় বৈঠক করে এ তিন বিসিএস নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার এসব সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে পিএসসি জানিয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (নন-ক্যাডার) পদে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, সভায় ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সন্দেহ সংক্রান্ত সব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নবগঠিত পিএসসির চারটি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, ২০২১ সালে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ৪৪তম বিসিএসের চলমান মৌখিক পরীক্ষা বাতিল।
পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ‘শিগগিরই’ জানানো হবে।
এ মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৮ মে। মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় তা স্থগিত করা হয়।
এর আগে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এ পরীক্ষা বাতিলের কারণে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীকে আবার মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।
অপরদিকে এ বিসিএসের এক বছর পর ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বরে আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনরায় তৃতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবগঠিত পিএসসি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়া এ পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।
অপরদিকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়। গত ৯ মে এতে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন। এখন তাদের সঙ্গে প্রিলিমিনারিতে পাস করা আরও সমান সংখ্যককে নির্বাচিত করে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচিত করা হবে।
আগে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থী যারা লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের ফল বহাল থাকবে। নতুনদের নিয়ে এ ফলাফল পুনরায় প্রকাশ করবে পিএসসি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব বিসিএসের কার্যক্রম এতদিন বন্ধ ছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে শুরু হওয়া এসব বিসিএস পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। ১৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ৪৩তম বিসিএসের ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের প্রজ্ঞাপনসহ ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
চলতি মাসে নতুন পিএসসি গঠনের মাধ্যমে এসব বিসিএসের স্থগিত থাকা কার্যক্রম আবার শুরু হল।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ২০৬৪ জনকে ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের গেজেট প্রকাশ করে।
পরীক্ষা বাতিলের কারণ
৪৪তম বিসিএসের পরীক্ষা বাতিলের কারণ ব্যাখ্যায় পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মতিউর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিসিএসের ন্যায্যতা বজায় রাখার আবেদন প্রার্থীদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সব প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পিএসসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলমান এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে থাকার তথ্য তুলে ধরে তা বালিতের কারণও বলা হয়েছে।
“লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে নতুন কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
অপরদিকে সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ৪৬ তম বিসিএসের নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে আরও সমসংখ্যক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছে পিএসসি।
৪৪তম বিসিএস
এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। ওই বছর ৩০ ডিসেম্বর থেকে অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। পরে তা বাড়িয়ে ২ মার্চ নির্ধারণ করে পিএসসি।
এতে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। এরপর ২০২২ সালের ২৭ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ ১৫ হাজার ৭০৮ জন প্রার্থীকে নিয়ে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ৮ মে।
৩ হাজার ৯৩০ প্রার্থীর মৌখিক নেওয়ার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কারফিউ জারি হলে ২৪ জুলাই তা স্থগিত করে পিএসসি।
এরপর ১ সেপ্টেম্বর থেকে মৌখিক শুরুর কথা থাকলেও গত ২৫ অগাস্ট তা আবারও স্থগিত করে পিএসসি। এই বিসিএসের ৭৫৯০ জন প্রার্থী মৌখিকের অপেক্ষায় ছিলেন।
৪৫তম বিসিএস
এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২৩ সালের ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭৮৯ জন লিখিত পরীক্ষায় বসেন চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি, যা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।
৪৬তম বিসিএস
এরপর ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি, যার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৬ এপ্রিল।
প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। গত ৯ মে এর
প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন।
২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরির্তনের পর অস্থির সময়ের কারণে ২৫ অগাস্ট তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন:
বিসিএস পরীক্ষা তিনবার নয়, দেওয়া যাবে চারবার
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ল ২ বছর