চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
Published : 18 Mar 2025, 01:09 PM
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।
ওই গণবিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে মঙ্গলবার রুল জারি করেছে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কেএম রাশেদুজ্জামান রাজার হাই কোর্ট বেঞ্চ।
চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম সোমবার এই রিট আবেদনটি করেন।
আদেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যে বিধিমালার আওতায় এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, তা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থি। আর বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। পরে তা আরো কঠোর করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।”
তিনি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন এই বিধিমালাটিকে সংশোধন করে সহজ করার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সেটা সংশোধনের আগেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি।
“এটা সঠিক হয়নি। এছাড়া গণ বিজ্ঞপ্তিতে (নতুন দল নিবন্ধনে) ২২টি জেলা এবং ১০০ উপজেলায় কমিটি থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের শর্তের কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক দল করার সুযোগ হারাবেন।”
রিটকারী পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আবেদা গুলরুখ বলেন, "এই বিধিমালা সংবিধান পরিপন্থি। কারণ সংবিধানে রাজনৈতিক দলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার পরিপন্থি এই বিধিমালা।”
তিনি বলেন, হাই কোর্ট গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছে। তবে এই স্থগিতাদেশ শুধু রিট আবেদনকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
গত ১০ মার্চ ওই গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বলা হয়, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে দলিলপত্রসহ ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য।
দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি পূরণের প্রমাণ জমা দিতে হয়।
নিবন্ধনের শর্ত
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটি যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোতে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়।
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
নতুন দলের নিবন্ধন পেতে তৃতীয় শর্তটি পূর্ণ করতে হবে। ১ ও ২ নম্বর শর্ত নতুন দলের পূরণের সুযোগও নেই।
২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। নিবন্ধিত দলগুলোকেই ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরে শর্ত পূরণ না হওয়া, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।