অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই এত তৎপরতা, সন্দেহভাজনদের তল্লাশি- বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
Published : 09 Dec 2022, 05:02 PM
সংঘর্ষের পর থেকে নয়া পল্টন রিকশা-গাড়ির বেল আর হর্নের শব্দবিহীন নিরব এক এলাকা; আগের মত সরগরম কোলাহল একেবারেই নেই। কড়া নিরাপত্তায় জনগণের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে কিছুদিন থেকে আলোচনায় থাকা ঢাকার এ ব্যস্ততম স্থান।
রাজধানীর তুলনামূলক সরব এ সড়কে থাকা বিএনপির কার্যালয়েও দুদিন থেকে তালা। নেতাকর্মীদের যাওয়া আসার সুযোগ না থাকায় আর পুরো এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেডে নিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে এখন একেবারেই সুনসান অবস্থা বিরাজ করছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে এ অবস্থা চলতে দেখা গেছে শুক্রবার দুপুরেও। রাস্তার দুই মাথায় কড়া পাহারায় রয়েছে পুলিশ। গলিগুলোর মুখেও বসেছে পাহারা।
কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই তেড়ে আসছেন পুলিশ সদস্যরা। তল্লাশি হচ্ছে, মুঠোফোনও দেখছেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর সন্দেহভাজনদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাশের পল্টন থানায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের এডিসি আবুল হাসান বলেছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই তাদের এত তৎপরতা। এ কারণেই সন্দেহজনক লোকজনকে তল্লাশি করা হচ্ছে। নাইটিঙ্গেল মোড়ে মোড় থেকে চারজনকে আটকের কথা জানান তিনি।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আল আমিন নামের এক যুবক। দূর থেকে তাকে দেখে ধরে নিয়ে আসতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন ঘটনাস্থলে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরতে দৌড় দিলে তার সঙ্গে থাকা আরেক জনও দৌড়াতে শুরু করেন। পরে দুজনকেই কলার ধরে নিয়ে আসে পুলিশ।
আল আমিন জানান, তিনি ধানমণ্ডিতে এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গাড়ি চালান। রাস্তায় গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি গাড়ির মিস্ত্রিকে খবর দিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির চাবিও পুলিশকে দেখান তিনি।
এরপরও পুলিশ তাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে পল্টন থানায় নিয়ে যায়। কর্মকর্তারা তাকে আশ্বাস দেন যাচাই-বাছাই শেষে কোনো কিছু না পাওয়া গেলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এ যুবকের সঙ্গে আটক হওয়া আরেক ব্যক্তি নাজমুলের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ খুঁজতে খুঁজতে এখানে এলে পুলিশ তাকে আটক করে। নিজের কোনো পরিচয় পত্র পুলিশকে দেখাতে পারেননি নাজমুল।
রহমাতুল্লাহ নামে এক পোশাক শ্রমিক নয়া পল্টনে এসে ফেইসবুকে লাইভ করছিলেন। তাকে লাইভ করতে দেখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন তিনি সাংবাদিক কি না। এরপর তাকেও ধরে নেওয়া হয় পল্টন থানায়।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে বিএনপিকর্মীরা বুধবার নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে সংঘর্ষে আহতদের একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান এবং অনেকে আহত হন।
পরে বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ সেখানে ‘বোমা’ পাওয়ার কথা দাবি করে। এরপর থেকে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর: সংঘাত গড়িয়ে সমঝোতার ইঙ্গিত
পল্টনের ঘটনায় পুলিশের ৪ মামলায় যত অভিযোগ
নয়া পল্টনে সংঘর্ষ: উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার ফখরুল ও আব্বাস
আর টানাপড়েনের মধ্যে নয়া পল্টন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর স্টেডিয়াম বা মিরপুর বাঙলা কলেজের পরিবর্তে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সায়েদাবাগের গোলাপবাগ মাঠে।
দুপুর দেড়টার দিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকিতে আসেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। নয়া পল্টনের এই এলাকায় যেন কেউ ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেন তিনি।
জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা যেন বেশি সতর্ক থাকেন সে বিষয়ে নির্দেশনা আসতে থাকে ওয়ারলেসে। বিভিন্ন জায়গায় বেঞ্চ পেতে বসে থাকা পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়। কোনো গলি পথ দিয়েও যেন কেউ ঢুকতে না পারে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর আগে পুলিশ শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে যাওয়া লোকজনকে বাধা দিচ্ছে এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়দের অনেকে।
এ প্রসঙ্গে যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব বলেন, জুমার নামাজ পড়তে যেতে কাউকেই বাধা দেওয়া হচ্ছে না বরং পুলিশ তাদের সহায়তা করছে। এখানে নারায়ে তাকবীর স্লোগান দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন ঢোকার চেষ্টা করছিল। এই স্লোগান কারা দেয় সেটা আপনাদের বুঝতে হবে। এটা দেয় বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলাম।
এ স্লোগান দিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। নারায়ে তাকবীর তো বিএনপির স্লোগান নয়, এটা জামাতের স্লোগান।“
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ বলেছিল, নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া হবে। শুক্রবার সকাল থেকেই আবার তাহলে এত কড়াকড়ি কেন, জানতে চাইলে বিপ্লব সরকার বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের নিরাপত্তা পরিকল্পনার প্রণয়ন করা হয়।
বিএনপি কার্যালয় ঘিরে পুলিশ, নয়া পল্টনে চলছে না যানবাহন
যাত্রী কম বাসও কম, চলছে টহল-তল্লাশি
অবশেষে সমঝোতা, শনিবার বিএনপির সমাবেশ গোলাপবাগ মাঠে
“টাইম টু টাইম এটা চেঞ্জ হয়। যখন আমরা নিরাপদ মনে করি তখন আমরা খুলে দিই। আর যখন জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে এরকম ন্যূনতম ঝুঁকি দেখা যায় তখন আমরা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।“
তিনি বলেন, "এই যে জামায়াতে ইসলামী এখানে ছিল... সাধারণ মুসল্লিদের ছদ্মবেশে জামাত বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে, ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো অপরাধীকে অথবা দুষ্কৃতিকারীকে অথবা নাশকতাকারীকে অথবা জামাত-শিবিরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।"