গার্ডার দুর্ঘটনা: ঠিকাদারের শাস্তি হলে ‘মেনে নেবে’ চীন

ঠিকাদার কোম্পানি সিজিজিসির একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ প্রতিনিধি দলও ওই ঘটনার তদন্তের জন্য চীন থেকে ঢাকায় এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2022, 09:10 AM
Updated : 18 August 2022, 09:10 AM

উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেইন দুর্ঘটনায় গাফিলতির জন্য চীনা ঠিকাদারের শাস্তি হলে চীন তা ‘মেনে নেবে’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সে দেশের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপতিতে তিনি বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত ১৫ অগাস্ট উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।

“এ সময় চীনের মান্যবর রাষ্ট্রদূত গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান।”

‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত।

চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। উত্তরার যে এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।

গত ১৫ অগাস্ট বিকালে উত্তরা জসীম উদ্দীন রোডের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটির একটি বক্সগার্ডার ট্রেইলারে তোলার সময় ভারসাম্য হারায় ক্রেইন। বিপুল ওজনের কংক্রিটের গার্ডারটি টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে।

ভারী ওই গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপ্ট হয়ে যায় গাড়িটি। ততে গাড়ির ভেতরেই মৃত্যু হয় পাঁচজনের, দুজনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। তারা সবাই এক পরিবারের সদস্য।

দুর্ঘটনার দিনই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে কমিটি বলেছে, দুর্ঘটনার পেছনে চীনা ঠিকাদার কোম্পানি সিজিজিসির ‘গাফিলতি’ পাওয়া গেছে।

সচিব আমিন উল্লাহ নূরী গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় শোক দিবসে ছুটির দিনে গার্ডার হস্তান্তরের কোনো কাজ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে ভাড়া করা ক্রেইন দিয়ে সেদিন গার্ডার সরানো হচ্ছিল।

ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের দায়ের করা মামলাতেও সিজিজিসিকে আসামি করা হয়েছে। চীনা ঠিকাদার কোম্পানি, ক্রেইন চালক এবং প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় এই প্রাণহানি হয়েছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে।

র‌্যাব ইতোমধ্যে ক্রেইনের চালক, হেলপারসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে ঠিকাদার কোম্পানির সেইফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী শাহও আছেন।

Also Read: গার্ডার দুর্ঘটনা: ক্রেইন চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী

Also Read: গার্ডার দুর্ঘটনা: নিরাপত্তা নিতে সতর্ক করে চিঠি, ব্যবস্থা নেয়নি ‘কেউই’

Also Read: গার্ডার দুর্ঘটনা: ঠিকাদারের ‘গাফিলতি’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

Also Read: বিআরটি প্রকল্প: দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ, জীবনেরও ঝুঁকি

Also Read: এক বিআরটিতেই বারবার গার্ডার দুর্ঘটনা

ঠিকাদার কোম্পানি সিজিজিসির একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ প্রতিনিধি দলও ওই ঘটনার তদন্তের জন্য চীন থেকে ঢাকায় এসেছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওয়ালীদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “প্রতিনিধি দলটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন।”

যে কোনো উন্নয়ন কাজে নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বৈঠকে বলেন, “ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিতে আমরা বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম, প্রকল্পের পরামর্শক দলের প্রধান টিগ ম্যাকরিন, সড়ক পরিবহন ও

মহাসড়ক বিভাগ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।