“নতুন বোর্ডের প্রথম সভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করা হবে,” বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
Published : 21 Aug 2024, 12:40 AM
প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে গঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল ব্যাংলাদেশ ব্যাংক; ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলের মধ্যে ফের এটির পর্ষদ ভেঙে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন পর্ষদে ফিরেছেন উদ্যোক্তা পরিচালক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন বোর্ডের প্রথম সভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করা হবে।”
পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক পদে এসেছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক আবদুল আউয়াল মিন্টু, আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও শেয়ারহোল্ডার জাকারিয়া তাহের।
পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোঃ জুলকার নায়েন, সীমান্ত ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখলেসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক মেলিতা মেহজাবিন এবং চার্টাড অ্যাকাউনটেন্ট মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তৌহিদুল আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোর্ড ভেঙে দিয়েছে। তাতে নতুন পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বোর্ড সভায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে।”
এর আগে চলতি বছর মে মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল ব্যাংলাদেশ ব্যাংক; চেয়ারম্যানসহ চার পরিচালকের পদত্যাগের মধ্যে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
ইউসিবিএলের সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা এবং এনবিএলের পর্ষদে এর বিরোধিতা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও পুর্নগঠনের করা হয়।
তার আগে আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২১ ডিসেম্বর অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগে ধুঁকতে থাকা এনবিএলের চেয়ারম্যান করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে, যিনি তখন মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন।
১৯৮৩ সালে ১৮ উদ্যোক্তা পরিচালক শুরু করেন ন্যাশনাল ব্যাংক, যাদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, একেএম আবু তাহের, আবু তাহের মিয়া, জয়নুল হক সিকদার, খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন।
এরপর ২০০৯ সালে পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক বদলের মাধ্যমে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে। এরপর একে একে অন্য পরিবারের পরিচালকরা পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন। জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা পর্ষদে আসেন।
এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান জয়নুল হক সিকদার। তার পর তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন গত ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এক বছর পর ২০২২ সালের অগাস্টে পর্ষদ থেকে সরে যেতে হয় উদ্যোক্তা পরিচালক ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন। একই পরিবারের মাবরুর হোসেনও বাদ পড়েন।
এর মাধ্যমে ব্যাংকটিতে সিকদার পরিবারের কর্তৃত্ব আরও নিরঙ্কুশ হয়। এ পরিবারের বাইরে পরিচালক হিসেবে তখন ছিলেন উদ্যোক্তা পরচিালকদের মধ্যে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
বাবার মৃত্যুর পর ব্যাংক ও পারিবারিক ব্যবসার উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও কন্যা পারভীন হক সিকদার। সন্তানদের বিবাদ সামাল দিতে অনেকটা ব্যর্থ হন মনোয়ারা হক সিকদার। পারিবারিক দ্বন্দের প্রভাব পড়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের উপরও। পরিচালক পর্ষদে সিকদার পরিবারের চার পরিচালক থাকায় বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠে।
এরমধ্যে ঋণ নিয়ে অনিয়ম এবং সিকদার পরিবারের সদস্য পরিচালকদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় দেড়শত কোটি টাকার অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ হয়। পরে ২০২৩ সাল থেকে হস্তক্ষেপ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বরে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়।
'ঘুরবে' ন্যাশনাল ব্যাংক, কারও সঙ্গে 'একীভূতও' হবে না: নতুন চেয়ারম
একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত 'এখনই না', সময় নেবে এনবিএল: চেয়ারম্যান
৪০ বছর পেরিয়ে অন্য ব্যাংকে মিলবে এনবিএল, আলোচনায় ইউসিবির নাম