জলাভূমি ভরাট করে বানানো ওই এলাকার বালু অপসারণ করে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Published : 06 Jan 2025, 10:28 PM
ঢাকার আমিনবাজার এলাকায় আবাসন কোম্পানি মধুমতি মডেল টাউনে থাকা সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে প্লট মালিকদের অনুরোধ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক।
এছাড়া জলাভূমি ভরাট করে বানানো ওই এলাকার বালু অপসারণ করে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তা না হলে রাজউক অভিযান চালিয়ে সেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করবে এবং প্রকল্পের জায়গা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে বলে সোমবার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে রাজউক।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজউকের মাস্টারপ্ল্যানে বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত আমিনবাজারের বিলামালিয়া ও বলিয়ারপুর মৌজায় জলাভূমি ভরাট করে মধুমতি মডেল টাউন নামে ওই প্রকল্প নেওয়া হয়। নিবন্ধন ও প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস সেখানে বালু ভরাট করে প্লট বিক্রির কার্যক্রম চালায়।
রাজউক বলছে, ওই প্রকল্প করতে গিয়ে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞা অনুযায়ী মাস্টারপ্ল্যানে চিহ্নিত এবং ধারা-৫ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬ (ঙ)এবং বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪(সংশোধিত ২০১২ ও ২০১৫ এর বিধি ১৬(৩) ভঙ্গ করা হয়েছে।
জলাভূমি ভরাট করে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করে। মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধ বলে রায় দেয়। সেই সঙ্গে বন্যা প্রবাহ এলাকা পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয় । রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ওই এলাকা মুখ্য জলস্রোত অববাহিকা বা প্রাকৃতিক জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত।
রাজউকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আদালত মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প অবৈধ ঘোষণার পরও সেসব প্লট মালিক মধুমতি মডেল টাউন বা ওই স্থানে ভিন্ন নামে প্লট কেনাবেচা করছেন এবং ইমারত বা স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তাদের স্বউদ্যোগে এসব স্থাপনা অপসারণের অনুরোধ করা হল।
“তা না হলে মধুমতি মডেল টাউন সংক্রান্ত মহামান্য হাই কোর্টের রিট মামলার রায় বাস্তবায়নের জন্য রাজউক জলাশয় পুনরুদ্ধার করে জলাশয় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এ সংক্রান্ত সব ধরনের ব্যয় হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের উদ্যোক্তা মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের কাছ থেকে আদায় করা হবে। আর ওই প্রকল্পের ভেতরের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যয় আইন অনুযায়ী প্লট মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।”
জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে কেউ যেন ওই প্রকল্পে প্লট না কেনে সেজন্য সতর্ক করতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
“উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের জরিপে দেখা গেছে সেখানে কিছু স্থাপনা আছে সেগুলো অপসারণ করা প্রয়োজন। সেগুলো অপসারণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটির বালু অপসারণ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এই কাজটি করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেখানে নতুন কোনো স্থাপনা যেন না ওঠে, কোনো গ্যাস, বিদ্যুৎ পানি সংযোগ না পায় সেজন্য সতর্ক করে এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।”
সাভারের আমিনবাজার এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে ৫৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি রিট আবেদন করে।
২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাই কোর্ট সাভারের আমিনবাজারে মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করে। পরে ২০০৯ সালে আপিল বিভাগও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে।
মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি প্লট ক্রয়কারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই রায়ে।