Published : 28 Apr 2025, 08:55 PM
স্বতন্ত্র কমিশন গঠনে পুলিশ সদর দপ্তর যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা নিয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশন কোনো সুনির্দিষ্ট ‘কাঠামো’ না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, তারা এ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন।
“এই জায়গাটা আমরা এখনো অপেক্ষা আমরা সরকারকে জানাচ্ছি। আর এই সরকারের আমলে না হলে আর কখনো হবে না সেটা অনেকে বলেন। সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটা এখনি করছি।”
পুলিশ সপ্তাহের আগে সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
সাধারণত কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুলিশের কোনো দপ্তরেই এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে এবার তা করা হয়েছে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দপ্তরের কিংবা সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়ে থাকে। সরকারপ্রধানের প্রেস সচিবের উপস্থিতিতে আইজিপির সংবাদ সম্মেলনও নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপির বাম পাশে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডান পাশে ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বারবার আলোচনায় এসেছে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি। এ আলোচনা এখন কোন পর্যায়ে আছে- এমন প্রশ্নে পুলিশ প্রধান বলেন, “আমরা খুবই আশান্বিত ছিলাম যে পুলিশ সংস্কার কমিশন যেহেতু গঠিত হয়েছে পুলিশের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ রাখবেন। আমরাও আমাদের কিছু প্রস্তাব তাদের দিয়েছিলাম এর মধ্যে প্রথমটা হচ্ছে একটা স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন। সরাসরি এক্সিকিউটিভের (নির্বাহী বিভাগের) অধীনে না থেকে পুলিশকে কিছুটা ’অটোনমি’ দেওয়া।”
সেটি ‘প্রশাসনিকের চেয়ে পরিচালনার’ দিক থেকে তুলে ধরে তিনি বলেন, “পুলিশ সংস্কার কমিশন বিষয়টি নিয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তারা এটাকে ইলাবোরেট করেনি, কোনও কাঠামো দেয়নি। আর কমিশন যেগুলো সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে তারা জানিয়েছে।
”অনেক ভালো ভালো সুপারিশ তারা করেছেন। কিন্তু আমাদের একটা প্রধান পরামর্শ ছিল পুলিশের কাজের সেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য। এই জায়গাটা আমরা এখনো অপেক্ষ করে আছি। আশা করি এটা অ্যাড্রেস করা হবে।”
‘অতীতে দেশের মানুষ পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে দেখেছে। আগামীতে যারা আসবেন তারা যে পুলিশকে পেটোয়া বাহিনীতে আবার পরিণত করবে না তার নিশ্চয়তা কী’- এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, “আসলে দেশ তো রাজনীতিবিদরাই চালাবেন। তারা তো নিশ্চই সবচাইতে বেশি বোদ্ধা। দেশের কল্যাণ, মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটাতো তারাই করেন। আমরা তাদের নেতৃত্বে আস্থা রাখি।
”আমরা বরাবরই বলে আসছি অনেক দেশে আছে যে পুলিশের ফাংশনাল অংশটুকু অর্থাৎ অপরাধ তদন্ত, গ্রেপ্তার এই বিষয়গুলো কোনো একটা স্বতন্ত্র বডিতে দেওয়া, যেটাকে আমরা স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশনের অধীনে দেওয়ার কথা বলেছি। আর যেটা প্রশাসনিক অংশ বদলি, পদোন্নতি, বেতন এগুলো মন্ত্রণালয় অথবা সরাসরি এক্সিকিউটিভের (নির্বাহী বিভাগের) অধীনে থাকা। এই ব্যবস্থা শ্রীলঙ্কাতেই রয়েছে। এরকম হতে পারে। কিন্তু আল্টিমেটলি আমাদের রাজনীতিবিদদের ওপরেই আস্থা রাখতে হবে। দে আর দ্যা লিডার।”
পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জনে পুলিশের কতটা সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের আগের যে পুলিশ ছিল সেটা কী পুরোপুরি সক্ষম পুলিশ, কার্যকরী পুলিশ অথবা আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশ ছিল? অবশ্যই না। আমরা চাইব আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রিচ করতে। এটা একটা এন্ডলেস জার্নি। তারপরও একটা লেবেল তো আছে। যখন মানুষ বলবে পুলিশ দুর্ব্যবহার করে না, সেবা পাওয়া যায়।”
এজন্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বড় একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছি। সেটা থেকে রিকভার করার জন্য আমাদের আরও দরকার ছিল আরও বেশি বিশেষজ্ঞর সহায়তা, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং- যেন লোকগুলোকে আমরা সেই জায়গা থেকে বের করে আনতে পারি।”
আরও পড়ুন:
ঢালাও আসামি নিয়ে আইজিপির কণ্ঠে অসহায়ত্ব