Published : 28 Apr 2025, 06:04 PM
পটপরিবর্তনের পর যেসব মামলায় ঢালাও আসামি করে ‘বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠছে, এ ধরনের মামলা পুলিশের না নেওয়ার উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইজিপি বাহারুল আলম।
এক্ষেত্রে ‘নিরীহ আসামিরা’ যাতে বাদীপক্ষের প্ররোচনায় না পড়ে পুলিশের কাছে যান, সেই পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান।
পুলিশ সপ্তাহর আগে সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান তুলে ধরেন বাহারুল।
সেখানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সারা দেশে মামলা হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে। একটি চক্র মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে এবং পুলিশই বলে আসছে- এসবের বেশিরভাগই মিথ্যা। এ বিষয়ে পুলিশ কী করছে?
জবাবে আইজিপি বাহারুল বলেন, “একটা সময় থানার ওসি মামলার অভিযোগ শুনে লিখে সই-স্বাক্ষর নিতেন। পাকিস্তান আমল অথবা তার আগে এমন হতো। এখন যেহেতু শিক্ষিতের হার বেড়েছে, সবাই নিজের হাতে লিখে নিয়ে আসেন। যখন একজন বাদী লিখে নিয়ে আসেন, তখন আমাদের আইন অনুযায়ী এর বাইরে আমরা যেতে পারি না।
“আমাদের সেটা মামলা হিসেবে নিতে হয়। সেটা সত্য না মিথ্যা- সেটা যাচাই করার আমাদের কোনো সুযোগ নেই। উনি অভিযোগ যেটা দেন, এক্সাক্টলি সেটাই মামলা হিসেবে নিয়ে নিতে হয়। এরপর তদন্তে গিয়ে আমরা দেখি কতোটা সত্য আর কতোটা মিথ্যা।”
তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর দেখা গেছে, অনেকে অসৎ উদ্দেশ্যে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য, ভয় দেখানোর জন্য মামলা করেছেন। অপরাধটা হয়তো করেছেন পাঁচজন কী দশজন, সেখানে আরও তিনশ লোকের নাম দিয়ে মামলা হচ্ছে। গতকালও একটা হয়েছে।”
পুলিশের কোনো আয়োজন উপলক্ষ্যে সাধারণত সংস্থার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবার সেই আয়োজনে ভিন্ন কিছুও দেখা গেল; আইজিপির বাম পাশে বসা ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আরেক পাশে ছিলেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর এবং সাগরের পাশে ছিলেন সহকারী প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার।
বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে প্রেস সচিবের সঙ্গে পরামর্শও করতে দেখা যায় আইজিপিকে। সংবাদ সম্মেলনে কে প্রশ্ন করবেন, কার কতোটুকু প্রশ্ন নেওয়া হবে তা নির্দেশ করে দিচ্ছিলেন শফিকুল আলম। আইজিপির সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রধানের প্রেস সচিবের উপস্থিতিও নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম বলেন, “আমি সকলকে নিশ্চিন্ত করতে পারি, আমরা শুরু থেকে- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে, আমরা বলেছি, পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশ পেয়েছেন যে, নিরীহ লোককে গ্রেপ্তার করা যেন না হয়, নিরীহ লোককে যেন হয়রানি না করা হয়। তদন্তে শুধুমাত্র যার বিরুদ্ধে দায়ভার পাওয়া যাবে, তার বেলাতেই আমরা গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট চাইব।”
এসব মামলাকে মিথ্যা মামলা বলা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেটাকে মিথ্যা মামলা বলছেন, মামলাটা মিথ্যা না, সেটা সত্য; কিন্তু আসামির সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া। এই জায়গাটা আমরা বন্ধ করতে পারছি না। আইনে আমাদের এই সীমাবদ্ধতাটা রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশে অজস্র ‘মামলা বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনে আসছে, আসামি করার পর তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাদী ‘হলফনামা’ দিয়ে বলছেন, তিনি নির্দোষ।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি বলছেন আপনারা মামলা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু একটা মামলায় শত শত আসামি- যাদের মধ্যে পাঁচ-দশজন ছাড়া সবাই নিরীহ, এটা আপনিই বললেন। এখনো একটা মামলারও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। এখন এই নিরীহ মানুষরা কী ভুগবে? বাদীদের কী হবে?
জবাবে আইজিপি বলেন, “বাদীর বিরুদ্ধে আমরা কিন্তু অভিযোগ দাখিল করতে পারি কোর্টের কাছে; কিন্তু সেটা হতে হবে আমার তদন্তটা শেষ হওয়ার পর। আর আপনি আরেকটা বাস্তব কথা বলেছেন যে, ৮ মাস হয়ে গেছে- তদন্ত বেশির ভাগই শেষ হয়নি, এখনো চলমান।
“হত্যা মামলার চার্জশিট হয়নি, কিন্তু অন্যান্য মামলা যেমন- আহত হওয়ার দুটো মামলায় ডিএমপি চার্জশিট দিয়েছে। তদন্তটা আসলে তাড়াহুড়ার বিষয় নয়। ‘একমাসের মধ্যে করে ফেলেন’- এটা করতে গেলে আমরা আল্টিমেটলি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারব না। সে কারণে ধৈর্য ধরতেই হবে, আপনারা যাই বলেন না কেন।”
বাহারুল আলম বলেন, “আর যারা মিথ্যাভাবে আসামি হয়ে আছেন, তাদের তো স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অসুবিধা নেই। যেহেতু আমি তদন্ত কর্মকর্তা জানি যে- তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে; আমি তো তাকে হয়রানি করব না, গ্রেপ্তার করব না। এখন আমি (তদন্ত কর্মকর্তা) যদি সেটা না করি, আর কে করতে পারে?”
নিরীহ আসামিদের বাদীর প্ররোচনার ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, “যেটা হয় বাদীরা- তারা আসামিদের বলছে যে, ‘আপনার নামটা বাদ দিয়ে দেব, আপনি আমাকে এই সুবিধা দেন’। মিথ্যা মামলার আসামিদের ভুল বুঝিয়ে অনেক বাদী সুবিধা আদায় করছে।
“বাদী তাকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে বলছে যে, ভুলে তাকে আসামি করা হয়েছিল। এরকম স্টেটমেন্ট দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা হচ্ছে। এই যে স্টেটমেন্ট হচ্ছে তদন্তের কাজে এর কিন্তু কোনো প্রভাব নেই।”
তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে না যাওয়া পর্যন্ত বাদীর এসব কথা কিন্তু কোর্টে কার্যকরী হবে না। অনেকে ভুল করে যাচ্ছেন, এই জায়গাটায় আমরা প্রটেকশন দিতে পারছি না।
“ভুল করে এরকম জায়গায় যাবেন না, কাউকে টাকা-পয়সা দেবেন না। যদি অসুবিধায় পড়েন পুলিশের কাছেই আসেন।”
আরও পড়ুন: