২০১৪ সালে এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘জিহাদের ডাক’ দিয়েছিলেন তিনি।
Published : 02 Aug 2022, 10:23 PM
তার ‘জিহাদ’ ছিল পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু কথিত সেই জিহাদের জন্য বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের ড্রোন হামলার নিহত এই জঙ্গি নেতা ২০১৪ সালে এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ‘জিহাদের ডাক’ দিয়েছিলেন।
তার সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। ওই সময়টায় একের পর এক জঙ্গিবাদী হামলায় নিহত হতে থাকেন মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, প্রকাশক ও অধিকারকর্মীরা।
লেখক অভিজিৎ রায় ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ খুন হওয়ার পর আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা-একিউআইএসের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করে বার্তাও দেওয়া হয়েছিল।
সরকার অবশ্য বরাবরই বলে আসছে, আল-কায়েদা বা আইএস এর মত কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই। তবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়- এমন দেশীয় উগ্রবাদীরাই সেসব হামলা-হত্যা চালিয়েছে।
আয়মান আল-জাওয়াহিরি: কায়রোর চিকিৎসক থেকে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা
আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি মার্কিন হামলায় নিহত
বিমান ছিনতাই করে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক এবং এর নেতা ওসামা বিন লাদেনের নাম।
২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডো হামলায় বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক এ সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব পান তারই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জাওয়াহিরি।
রয়টার্স লিখেছে, বিন লাদেন হত্যার বদলা নিতে পশ্চিমাদের উপর আক্রমণের হুমকি দিয়েছিলেন এক সময়ে চক্ষু চিকিৎসক জাওয়াহিরি। কিন্তু পশ্চিমা আক্রমণে এবং আইএস এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ত্রাসের চমক ধরে রাখতে তিনি নতুন কৌশল নেন।
বিশ্বের নানা প্রান্তে ছোট ছোট চরমপন্থি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে আল-কায়েদা। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে দেশে সন্ত্রাসী হামলার বিস্তার ঘটান এই জঙ্গি নেতা। এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকে অস্থিরতায় ডুবিয়ে দেয় সেই সহিংসতা।
বিন লাদেনের মতই কখনও ভিডিও, কখনও অডিও বার্তা ইন্টারনেটে ছেড়ে ত্রাস আর আতঙ্ক জারির রাখার পাশাপাশি ধর্মের ধুঁয়া তুলে মুসলমানদের উদ্বেলিত করার চেষ্টা করতেন জাওয়াহিরি। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেরকম এক বার্তায় তিনি বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ‘জিহাদের’ ডাক দেন।
২০১৩ সালে হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে ওই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে ‘হত্যা করার’ অভিযোগ আনা হয় সরকারের বিরুদ্ধে, যদিও তার কোনা ভিত্তি ছিল না।
বাংলাদেশকে ‘বিরাট এক জেলখানা’ আখ্যায়িত করে সেই বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার “আসল লক্ষ্য ছিল এই উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি দুর্বল করা”।
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি নিয়েও সেখানে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়; যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাওয়াহিরি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরেক বার্তায় জাওয়াহিরি উপমহাদেশে আল-কায়েদার শাখা গঠনকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, আসাম, গুজরাট, আহমেদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য ‘আনন্দের খবর’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
বাংলাদেশে ‘জিহাদের’ ডাক জাহওয়াহিরি যখন দেন, তার ক’দিন আগেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
জাওয়াহিরির ওই বার্তায় বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামদের ওপর ইসলাম ‘যে দায়িত্ব দিয়েছে’- তা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, “আমি আপনাদের ইন্তিফাদা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
জাওয়াহিরি ওই ভিডিও বার্তা প্রচারের পর সেটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসিতে অস্টিন পি স্টেইট ইউনিভার্সিটির সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক তাজ হাশমি বলেছিলেন, ওই কণ্ঠ জাওয়াহিরির, তিনি নিশ্চিত।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সে সময় বলেছিলেন, “জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরাও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছি।”
ওই বছর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এক মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আয়মান আল-জাওয়াহিরি ও তার জঙ্গি দল আল-কায়েদা তরুণদের ‘টার্গেট’ করে ‘মগজ ধোলাই’ চালাচ্ছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে জাওয়াহিরি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে গোপন আশ্রয়ে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। রোববার সকালে আফগানিস্তানের কাবুলে সিআইএ এর হামলায় তিনি নিহত হন।