আল কায়েদার বর্তমান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
Published : 15 Feb 2014, 11:58 AM
গত বছরের হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসাবে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিচার নিয়েও জঙ্গি সংগঠনটির ক্ষোভ এতে স্পষ্ট হয়েছে।
বার্তার একটি ‘ক্লিপ’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা, ইসলামের বিরুদ্ধে যারা ক্রুসেড ঘোষণা করেছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। উপমহাদেশ ও পশ্চিমের শীর্ষ অপরাধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আপনাদেরকে তারা অবিশ্বাসীদের দাসে পরিণত করতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ উগ্র ইসলামী দলগুলোও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বার্তায় জাওয়াহিরি পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তিকে আরবিতে বলতে শোনা যায়, পাশাপাশি ইংরেজি সাবটাইটেলে দেখা যায় তার তর্জমা।
বাংলাদেশকে ‘বিরাট এক জেলখানা’ হিসাবে তুলে ধরে এই বার্তায় বলা হয়, এই দেশে মুসলমানদের সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত।
২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ক্লিপের প্রথম সোয়া দুই মিনিট গত বছর ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ এবং তাদের তুলে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কিছু আলোকচিত্র দেখানো হয়েছে। এরপর শুরু হয়েছে জাওয়াহিরির বক্তব্য।
‘বাংলাদেশ: ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স’ শিরোনামে এই বার্তায় বলা হয়, “মুসলমানদের ওপর একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সত্য গোপন করছে। আর এই রক্ত ঝরছে বাংলাদেশে।”
জাওয়াহিরির নামে প্রচারিত এই বার্তায় বলা হয়, “বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার, যাতে ভারতীয় দালাল, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদরাও জড়িত।”
আর উপমহাদেশের, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ‘মুসলিম উম্মাহ’ এই ষড়যন্ত্রের ‘মূল শিকার’ বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
“বাংলাদেশে ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও রসুলের (স.) বিরুদ্ধে আজ যে অপরাধ ঘটানো হচ্ছে, তার বীজ বপণ করেছে সেই ক্রিমিনালরাই। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঠেকানো বা পাকিস্তানি সামরিক শাসন থেকে মুক্তি- কোনোটাই এর মূল লক্ষ্য ছিল না।”
আসল লক্ষ্য ছিল এই উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি দুর্বল করা, মুসলমানদের বিশ্বাসকে ছিন্নভিন্ন করা, আঞ্চলিক বিভেদ আর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর মৃত্যু ডেকে আনা।”
বার্তায় বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানে আজ যা হচ্ছে- তা সেই ‘শয়তানি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নেরই প্রাথমিক পর্যায়।
“কাল যারা বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালালো, আজ তারাই পকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। একইভাবে বাঙালির সম্মান রক্ষার ধুঁয়া তুলে যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল, তারাই আজ বাঙালির বিশ্বাস, সম্মান, জীবন ও সম্পদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।”
জাওয়াহিরি বলেন, “তারা দাবি করে, ইসলাম ও এই উপমহাদেশের মুসলমানদের রক্ষায় ৬০ বছরের বেশি সময় আগে তারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল। আর আজ আমরা যে পাকিস্তান দেখি, সেখানে শরিয়ার কোনো স্খান নেই।
“একইভাবে তারা দাবি করে ৪০ বছর আগে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীনতা এবং জনগণের মুক্তির জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে বিরাট এক কারাগারে, যেখানে মুসলমানদের সম্মান ও পবিত্র স্থান অপবিত্র করা হচ্ছে। ক্রুসেডার কসাইদের হয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে হত্যা-নির্যাতন।”
আর ‘ইসলামবিরোধিতার’ জায়গায় ‘স্বার্থ’ এক হওয়ায় ‘এসব ঘটনায়’ বাংলাদেশ সরকার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘সমর্থন’ পাচ্ছে বলেও বার্তায় মন্তব্য করা হয়।
“বাংলাদেশের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তাদের অপরাধ ছিল একটাই- ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সঙ্গে কতিপয় বিপথগামী নাস্তিক্যবাদির যোগসাজশের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছিল।”
হেফাজতের পাশাপাশি জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দণ্ড নিয়ে আল কায়েদার ক্ষোভও বার্তায় উঠে এসেছে।
“শত শত আলেমকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। তাদের আটক করে জেলে পাঠানো হচ্ছে, বিচারের মুখোমুখী করা হচ্ছে; কোনো অপরাধ না থাকার পরও মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো সাজা দেয়া হচ্ছে। তাদের একমাত্র দোষ ছিল ইসলামবিরোধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।”
জাওয়াহিরি- যিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন বলে ধারণা করা হয়- এই বার্তায় ইসলামের ‘সত্যিকারের আলেমদের’ কাছে জড়ো হয়ে তাদের সমর্থন ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।
পাশাপাশি উলামায়ে কেরামদের ওপর ইসলাম ‘যে দায়িত্ব দিয়েছে’- তা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
“আমি আপনাদের ইন্তিফাদা এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”