“কোন প্রশ্ন আসবে লটারির আগে তো আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না,” বলেন তিনি।
Published : 09 Jul 2024, 09:21 PM
চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অসৎ কাজের প্রমাণ পেলে খোদ নিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন।
তিনি বলেছেন, “কোন অসৎ কাজে যদি আমারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, আমাকেও ফায়ার করুন। এটা নিশ্চিত করা হোক।”
বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পিএসসির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।
সোহরাব হোসাইন বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের দিকে লাখ লাখ তরুণ তাকিয়ে আছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, এই প্রতিষ্ঠানে কোনো তদবির পর্যন্ত হয় না। সেই প্রতিষ্ঠানটি যাতে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য সবার সমর্থন আমরা চাই। অযথা যেন এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট না হয়।
“অনেকে প্রশ্ন নিয়ে প্রতারণার শিকার হন। অনেকে বোর্ডের প্রশ্নে মত অনুরূপ একটি প্রশ্ন করে একটি প্রতারক চক্র সেগুলো বিক্রি করে টাকা কামাচ্ছে। সেটাও বিবেচনা করে দেখতে হবে।”
একটি চক্র প্রায় এক যুগ ধরে পিএসসির অধীনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত বলে রোববার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে। সেখান ওই চক্রের ছয়জনের ছবি প্রকাশ করা হয়।
এদের মধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিভিন্ন ছবি ফেইসবুকে ঘুরতে থাকে।
এরপর ওই চক্রের সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে সিআইডি। আবেদ আলী, তার ছেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামসহ মোট ১৭ জনকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- পিএসসির দুই উপপরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ডেসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ও তার ভাই সায়েম হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, লিটন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
প্রশ্নফাঁস নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে কর্ম কমিশন। জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পিএসসি।
“কোন প্রশ্ন আসবে তা লটারির আগে কেউ বলতে পারবে না’
বিসিএসের প্রশ্নপত্র তৈরি করে তা লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় জানিয়ে সোহরাব হোসাইন বলেছেন, লটারির আগে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় কোন প্রশ্ন আসবে।
তিনি বলেন, “লটারির আগে তো আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। তবে প্রশ্নফাঁস যে হয়নি বা হতে পারে না তা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ এটা এককভাবে কেই মেইনটেইন করে না। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকে সমন্বয় করেন।”
বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস করা ‘ভীষণ কঠিন’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কারণ প্রশ্নফাঁস করতে হলে ছয় সেট ফাঁস করতে হবে, ছয় সেট মানে হল ছয় দুগুণে ১২শ প্রশ্ন। লটারির আগে তো কেউ বলতে পারবে না কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে।”
বিসিএসের প্রশ্ন প্রণয়ন নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, “যারা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করেন, তার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। অনেক সময় তারা প্রশ্ন তৈরি করে সরাসরি, অনেক সময় ডাকেও পাঠান। সেটা ট্রাঙ্কে সিলগালা করা থাকে। ১০ জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার পর একদিন আমরা প্রশ্নপত্র মডারেশনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করি।
“গোপন রুমে সিলগালা করা সেই প্রশ্ন খোলা হয়। সেখানে উনারা উনাদের মত মডারেশন করে আবার সিলগালা করে জমা দেন। সেখান থেকে প্রশ্ন প্রেসে যায়। প্রেস থেকে আসার পর আমাদের বিসিএসের ২০টা প্যাকেট বিভিন্ন বিভাগে যায়। ঢাকারগুলো এখানে পুলিশ পাহারায় সংরক্ষিত থাকে।”
পরীক্ষার দিন দুইজন ‘বিশিষ্ট নাগরিকের’ উপস্থিতিতে লটারি হয় বলে জানান তিনি।
“সকাল ১০টায় পরীক্ষা হলে ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে ৯টা ৩০ মিনিটে আমরা কেন্দ্রে পাঠাই। বিসিএসের ক্ষেত্রে ছয় সেট থেকে একটি সেট লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডার বা দশম গ্রেড ও তার পরের গ্রেডগুলোর জন্য চারটি সেট থাকে, সেখান থেকে লটারিতে একটি নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস করাটা কঠিন।”
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আগে চাকরি হারিয়ে পরে অনেকে আবার চাকরিতে ফিরে এসেছেন জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, “তারা কোর্টে গিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে এসেছেন। আমরা প্রস্তুত; যেই মুহূর্তে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হবে, সেই মুহূর্তে তাকে সাসপেন্ড করা হবে।”
আরও পড়ুন-
প্রশ্ন ফাঁস: সেই ১৭ জনের নামে মামলা, পিএসসির তদন্ত কমিটি
প্রশ্নবিদ্ধ পরীক্ষা বাতিল হবে? প্রমাণ পেলে তখন সিদ্ধান্ত, বললেন পিএসসি চেয়ারম্যান
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসসির দুই উপপরিচালকসহ গ্রেপ্তার ১৭