কামরুলের বিরুদ্ধে সোয়া ৬ কোটি এবং মহিববুর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
Published : 23 Dec 2024, 06:35 PM
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সোমবার সাংবাদিকদের জানান, কমিশনের ঢাকা ও পটুয়াখারী কার্যালয়ে মামলা তিনটি দায়ের করা হয়েছে।
ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাশাপাশি কামরুলের স্ত্রী বেগম তায়েবা ইসলাম, ছেলে ডা. তানজীর ইসলাম ও মেয়ে সেগুপ্তা ইসলামকে সম্পদ বিবরণীতে দাখিল করতে বলেছে দুদক।
কামরুলের ছেলের ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫ টাকা এবং মেয়ের ১ কোটি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৫ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের’ খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়ে দুদক বলেছে, নামে ও বেনামে তাদের আরো সম্পদ থাকার ‘সম্ভবনা’ রয়েছে।
দুদকের নথিতে পলা হয়েছে, “কামরুল ইসলাম পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের সাথে সঙ্গতিবিহীন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।”
কামরুল ইসলাম নিজের এবং তার কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত মোট ১৫টি হিসাবে মোট ২১ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৫ টাকা লেনদেন করেছেন জানিয়ে দুদক বলছে, তিনি ওই টাকা ‘সন্দেহজনকভাবে হস্তান্তর, রূপান্তর, স্থানান্তর’ করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা কামরুল। ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ তিনি সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে প্রথমে সদস্য ও পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হলে দলে তার প্রভাব বেড়ে যায়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর তার বিরুদ্ধে নিয়োগ, বদলি ও খাদ্য আমদানিসহ নানা কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালের জুনে ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের দুই লাখ টন পচা গম আমদানির ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন কামরুল।
সরকার পতনের পর গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে কামরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার আগে গত ১৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
এদিকে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের নামে দুটি মামলা করেছে দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে মামলাগুলো দায়ের করেন।
প্রথম মামলার এজাহারে আসামি মহিববুর রহমানের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩১ হাজার ৪৭৯ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ২৩টি ব্যাংক হিসাবে ২৩ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৬ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ‘মানি লন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।
দ্বিতীয় মামলায় মহিববুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে। ফাতেমা আক্তারের নামে ৩ কোটি ৯২ লাখ ১৯ হাজার ৭৫২ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফাতেমার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ‘মানিলন্ডারিংয়ের’ অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। দুদক বলছে, স্বামীর ‘অবৈধ অর্থে’ সম্পদশালী হয়েছেন তিনি।
গত অগাস্টে মহিববুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তদন্তকারীরা বলছেন, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে মহিববুরের স্ত্রীর নামে অন্তত ৩৭ একর জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন মহিববুর রহমান মুহিব। তার পর থেকেই ফাতেমা আক্তার রেখার জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।