নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে ‘রাবেয়া বুক হাউস’ ও ‘গ্রন্থ প্রকাশ’ নামে দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল বন্ধের সুপারিশ করেছে অমর একুশে বইমেলার জন্য গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
এছাড়া মা সেরা, জ্ঞান বিতান, মৌ প্রকাশনী, বঙ্গজ প্রকাশন, গাজী প্রকাশনী, মেধা পাবলিকেশন্স ও দেশজ নামের ৭ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার টাস্কফোর্স সদস্যরা বইমেলা পরিদর্শন শেষে বইমেলা পরিচালনা কমিটিকে লিখিত চিঠিতে এ অবস্থানের কথা জানায়।
টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম কুমার দে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কী ধরনের অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে অসীম কুমার দে বলেন, “তারা পাইরেটেড বই বিক্রি করছে। এছাড়া প্রকাশক বা পরিবেশক না হয়েও তারা কিছু বই বিক্রি করছে।
“মেলার নীতিমালা অনুযায়ী প্রকাশক বা পরিবেশক ছাড়া কোনো স্টলে অন্য কোনো প্রকাশনীর বই বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু তারা বিভিন্ন প্রকাশনীর বই বিক্রি করছিল। কিছু বই পেয়েছি, যেগুলোর আইএসবিএন নাম্বার নেই।”
এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছিল জানিয়ে অসীম কুমার দে বলেন, “কিন্তু তারা নীতিমালা না মেনে একই অনিয়ম করে যাচ্ছে।”
এ দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাবেয়া বুক হাউসে গিয়ে দেখা যায়, পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে স্টলটি। তবে ভেতরে বসেছিলেন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা।
তাদের মধ্যে মামুন নামের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, “আমাদের স্টল বন্ধ করে দিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে এখন কিছু বলতে পারব না।”
গ্রন্থ প্রকাশের স্টল দেখা যায়, তবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। স্টলের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি একটি ফোন নম্বর দেন।
সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে নিজেকে জাকির পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “এত কড়াকড়ি আমরা জানতাম না। আমাদের এখানে কিছু বই নিয়ে উনারা আপত্তি করেছেন। সেই বইগুলো সরিয়ে নিয়েছি।”
এছাড়া ‘পাঠক সমাবেশ’ যাতে নীতিমালা অনুসরণ করে প্যাভিলিয়ন পরিচালনা করে, তা মনে করিয়ে দিতে চিঠি দিতে সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই প্রকাশনা সংস্থা প্যাভিলিয়নের চারপাশে গাছের টব ও ফেস্টুন বসিয়ে দর্শনার্থীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থা কালধারা’র স্টল বরাদ্দ বাতিলের কথা জানানো হয়েছে। স্টল বরাদ্দ পেয়েও তা চালু না করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেলার অব্যবস্থাপনা
এদিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলা পরিদর্শনের পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ কিছু অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে মেলা পরিচালনা কমিটিকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে আছে-
শিশু চত্বরে প্রবেশের রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত।
তথ্যকেন্দ্র এবং যে সমস্ত স্টলের সামনে ও রাস্তায় পানি জমে থাকে, সেখানে পানি অপসারণ করে ভিটি বালু দিয়ে সমান করা।
মিজান পাবলিশার্সের প্যাভিলিয়নের উচ্চতা, প্রথমার প্যাভিলিয়ন চারপাশে বৃদ্ধি করে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর নীতিমালার ধারা ১০.৫ এবং প্রকাশনা সংস্থা ‘আকাশ’ শন দিয়ে প্যাভিলিয়নের ছাদ নির্মাণ করে নীতিমালার ধারা ১৪.২ (ঙ) শর্ত ভঙ্গ করায় তাদেরকে নীতিমালা মেনে চলার জন্য চিঠি দেওয়া।
টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে প্রবেশমুখে, ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে দিয়ে মন্দিরের গেট পর্যন্ত ওয়াশ রুমসহ এবং মাঠের চারপাশে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
ফুড জোনের যারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে তারা তাদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য রান্না, প্রদর্শন এবং রান্নার সামগ্রী রাখতে পারবেন না। স্টলের বাইরের অংশে কেবল খাবার খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে। প্রতিদিন ফুড জোন পরিদর্শন করতে হবে।
বরাদ্দপত্র ব্যতিত কোনো প্যাভিলিয়ন, স্টল, খাবারের দোকান, কিয়স্ক বা অন্যকোনো স্থাপনা বইমেলা প্রাঙ্গণে রাখা যাবে না।
নানা অনুষ্ঠান
মঙ্গলবার বইমেলার সপ্তম দিনে নতুন বই এসেছে ১০৪টি।
বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মাহবুব তালুকদার এবং স্মরণ: আলী ইমাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রাবন্ধিক গাজী রহমান বলেন, “জীবনের বিচিত্র বিকাশে এবং ব্যক্তিত্বের বহুতর প্রকাশে মাহবুব তালুকদারের অবস্থান তার অবিচল দৃঢ়তা এবং আত্মবোধের প্রতি পূর্ণ আস্থাই প্রমাণ করে। তিনি বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান রূপকার ও ছোটোগল্পের পারঙ্গম লেখক। গভীর অনুভূতিসম্পন্ন সাহিত্যিক মাহবুব তালুকদারের লেখায় মানুষের জীবন, অন্তরের জগতের কথা উঠে এসেছে।”
আর আহমাদ মাযহারের লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়, “পাঠ্যপুস্তকের নানা অনুশাসনের বাইরে শিশু-কিশোরদের অনাবিল আনন্দ দান ও তাদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন আলী ইমাম। তার শিশুসাহিত্যপ্রীতি কেবল লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিস্তৃত ছিল বেতার-টিভির ছোটোদের অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনা থেকে শুরু করে শিশুসংগঠনের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ পর্যন্ত।”
অনুষ্ঠানে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, “আলী ইমাম ও মাহবুব তালুকদার বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল দুটি নাম। তারা তাদের চিন্তা, চেতনা ও সাহিত্যকর্ম দিয়ে আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।”
আলোচনায় অংশ নেন ড. নিমাই মন্ডল, আমীরুল ইসলাম ও ওমর কায়সার।
মঙ্গলবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবুল কাসেম, সাকিরা পারভীন, জালাল ফিরোজ ও পলাশ মাহবুব।
সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক, গোলাম কিবরিয়া পিনু ও ইউসুফ রেজা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী মাহতাব সুমন, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী ও সংগীতা চৌধুরী।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন মজুমদার, মনোতোষ চক্রবর্তী, শামসেল হক চিশতি, এ এইচ এম সালাউদ্দিন, অণিমা মুক্তি গোমেজ, মো. মোখলেসুর রহমান ও মো. মুরাদ হোসেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), রবিনস্ চৌধুরী (কী-বোর্ড), রতন কুমার রায় (দোতারা), মো. হাসান আলী (বাঁশি) ও বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
বুধবার যা থাকছে
মেলার অষ্টম দিনে বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: ওস্তাদ আলী আকবর খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অং নেবেন কমল খালিদ ও আলী এফ এম রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শেখ সাদী খান।