বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অভ্র কিবোর্ডের জন্য মেহদী ছাড়াও আরও তিনজনকে দলগতভাবে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
Published : 09 Feb 2025, 08:26 PM
এবছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন অভ্র কিবোর্ডের নির্মাতা মেহদী হাসান খান। তবে তিনি এককভাবে এ পুরস্কার নিতে আগ্রহী নন, কারণ এটি তৈরিতে তার আরও তিন বন্ধুরও ভূমিকা ছিল।
তাই অভ্রর জন্য চার গুণীকেই দলগতভাবে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
রোববার বিকালে ফেইসবুকে এক পোস্টে ফারুকী লিখেছেন, “আমরা জানতাম মেহদী হাসান খান পুরস্কার গ্রহণ করতে আগ্রহী না। এর আগেও তাকে অ্যাপ্রোচ করা হয়েছিল। তিনি পুরস্কার না নিতে পারেন জেনেও আমাদের ক্যাবিনেট থেকে আমরা পুরস্কার ঘোষণা করতে সম্মত হই। এর মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা কাদের সেলিব্রেট করব।”
বন্ধুদের ছাড়া পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মেহদী, তা জানিয়ে ফারুকী লিখেছেন, “মেহদী একা এই কৃতিত্ব নিতে চাননি। তার আরো তিন বন্ধু রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম এবং শাবাব মুস্তাফা; যারাও অভ্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাদের ছাড়া তিনি পুরস্কার নিতে চাননি।
“আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া এই চার গুণীকেই অভ্রর জন্য দলগতভাবে একুশে পদকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”
উপদেষ্টা ফারুকী বলেছেন, মেহদীর চার চার বন্ধুই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে আসছেন পুরস্কার গ্রহণ করতে। যার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন তিনি এবং এই ঘটনা তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানার পর ‘অভ্র কিবোর্ড বাংলা সফটওয়্যার পেইজে’ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মেহদী। বন্ধুদের নিয়ে একুশে পদক গ্রহণের ছোট একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, "২০০৩ সালে যখন অভ্রর কাজ শুরু করলাম বাংলা ফন্ট বানানো, সফটওয়্যার বানানো, সবকিছু একসাথে করলাম আমরা। বিভিন্ন সময়ে এরকম অবদান রাখা অনেকে এসেছেন, চলেও গিয়েছেন নানা কারণে, কিন্তু কোন কারণে হাতে গোনা কয়েকজন লেগে থাকলাম আমরা বছর দশকের উপর।"
দলগত কাজের কৃতিত্ব একক ব্যক্তি না পাক সেই চেষ্টা চালিয়েছেন জানিয়ে মেহদী লিখেছেন,"একুশে পদক ঘোষণার পরে উপদেষ্টা ফারুকী ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হল। ওনাকে ব্যাপারটা বোঝাতে খুব বেশি চেষ্টা করতে হয় নাই, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
"২০০৩ সাল থেকে অনেকে অভ্র কাজে সাহায্য করেছেন, এদের সবার অবদান আছে। কিন্তু শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি রিফাত, সিয়াম, শাবাব। এদের ছাড়া আমি অভ্রর নামে একুশে পদক গ্রহণ করতে পারব না।"
দলগত কাজ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদাহরণস্বরূপ রেখে গিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মেহদী।
সবশেষ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে শুভকামনা জানিয়ে তিনি লেখেন, "বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও পদক দিচ্ছেন। দলকে স্বীকৃতি দেয়ার এই সংস্কৃতি চালু থাকুক।"
গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিতে ১৫ জনকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়।
এবার ভাষা ও সাহিত্যে দুইজনকে মনোনীত করা হয়েছে। তারা হলেন গত ডিসেম্বরে প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর) এবং কথা সাহিত্যিক শহীদুল জহির (মো. শহীদুল হক, মরণোত্তর)।
শিল্পকলায় বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে এবারের একুশে পদকের জন্য চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে মনোনীত করা হয়েছে সাড়া জাগানো ছুটির ঘণ্টা ছবির পরিচালক প্রয়াত আজিজুর রহমানকে (মরণোত্তর)।
সংগীতে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে দুইজনকে। তারা হলেন- শিল্পী, সংগীত শিক্ষক ও সুরকার ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর) এবং শিল্পী ফেরদৌস আরা।
শিল্পকলায় চিত্রশিল্প ক্যাটাগরিতে রোকেয়া সুলতানা ও আলোকচিত্রে নাসির আলী মামুনকে মনোনীত করা হয়েছে।
গবেষণায় একুশে পদক পাচ্ছেন লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মূলধারা ৭১ এর রচয়িতা মঈদুল হাসান।
সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারে আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে এবারের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
শিক্ষায় লেখক ও অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নিয়াজ জামান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় আলোকচিত্রী ও দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলম, সমাজসেবায় চট্টগ্রামের সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীকে (মরণোত্তর) পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
পাশাপাশি ক্রীড়ায় এবার পুরস্কার পাচ্ছে সাফ জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
স্বাধীনতা পুরস্কারের পর রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পদক দিয়ে আসছে সরকার।
আরও পড়ুন: