ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।
Published : 30 Oct 2024, 10:03 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারবে বলে আশা করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক।
বুধবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের কাজ এবং ঢাকায় সফরকালীন সরকারের উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান, সংস্কার কমিশনের প্রধান, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে অবহিত করেন ফলকার টুর্ক।
তিনি বলেন, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
অভ্যুত্থানের মধ্যে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে যে আদালতে মামলা চলছে, সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজ নিয়েও আলোচনা করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।
পাশাপাশি দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশন নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতন আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে কাজ করছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
অভিযোগের সত্যতা উদঘাটন, দায়দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সুপারিশ করবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া ‘গুমের’ ঘটনা নিয়েও তদন্ত কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান ফলকার টুর্ক।
তিনি বলেন, “এমন অনেক কিছু আছে যা ঠিক করা দরকার।”
গুমের ঘটনা তদন্তে তার অফিস তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করছে বলে জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ‘স্বাধীন এবং সম্পূর্ণ কার্যকর’ করে শক্তিশালী করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ফলকার টুর্ক বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর ঢাকায় তাদের উপস্থিতি জোরদার করতে চায়।
বাংলাদেশে এই সফরের জন্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আপনার সফরে খুশি। তারা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকার যেন একসঙ্গে চলতে পারে তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের ‘ভুল ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি করবে না’ বলেও প্রতিশ্রুতি দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তার দপ্তর জানায়, রোহিঙ্গা সংকট, বিশেষ করে মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার নতুন রোহিঙ্গার আগমন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
ফলকার টুর্ক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আরও আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সংকট সমাধানে অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করতে জাতিসংঘের সহায়তা চান, যাতে ওই অঞ্চলের বাস্তুচ্যুত লোকেরা তাদের নিজ অঞ্চলের কাছাকাছি থাকতে পারে।
তারা দুজনই এ আঞ্চলিক সমস্যাটির দ্রুততম টেকসই সমাধানের জন্য ‘কিছু গতিশীল উদ্যোগ’ নেওয়ার প্রচেষ্টার কথা বলেন এবং এক্ষেত্রে আসিয়ানকে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।