বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালের মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে সাতজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
Published : 03 Feb 2015, 07:18 AM
মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনায় আরো অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের ১০ জনই দগ্ধ হয়েছেন।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মনির হোসেন জানান, কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ‘আইকন পরিবহন’র একটি বাস ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে জগমোহনপুর এলাকায় পৌঁছালে তাতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে অবরোধ সমর্থকরা। এতে বাসটিতে আগুন ধরে পুড়ে ঘটনাস্থলেই সাত জনের মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দগ্ধ ১০ জনকে পরে ঢাকায় পাঠানো হয় বলে কুমিল্লা মেডিকেলের পরিচালক হাবিব আব্দুল্লাহ সোহেল জানিয়েছেন।
নিহতদের ছয়জনের পরিচয় জানা গেছে।
তারা হলেন- যশোর শহরের সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা জাসদ নেতা নুরুজ্জামান পপলু (৪৮) ও তার মেয়ে নাইমা তাসনিন মাইশা (১৫),কক্সবাজারের চকরিয়ার ইউসুফ (৫৫) ও তাহের (৩৮), নরসিংদীর আসমা বেগম (৩৮) ও তার ৫ বছরের মেয়ে শান্ত।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মাইশা যশোর পুলিশ লাইনস স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় তার মা মাহরুহা মিতাও আহত হয়েছেন।
মিতার বরাত দিয়ে চৌদ্দগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবময় দেওয়ান জানান, পপলু ঠিকাদার ছিলেন। ব্যবসায়িক কাজে কক্সবাজার যাওয়ার সময় সাগর দেখাতে স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যান তিনি।
আহত যাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে নয় জনের পরিচয় জানা গেছে।
তারা হলেন- বাসচালক দুলাল (৪৫), যাত্রী মানিকগঞ্জের ফারুক আহমেদ (২৩), শরিফুল (১৯), আলী হোসেন (২০), নারায়ণগঞ্জের জিলকদ (২২), শফিকুল ইসলাম (২২), কক্সবাজারের রাশেদুল বাদশা (৪২), হামিদ (৩৪) ও ফরিদপুরের আরিফ (১৮)।
এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে কুমিল্লা মেডিকেলের ডা. হাবিব জানান।
এছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো অন্তত ১৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এরা হলেন- কক্সবাজারের চকরিয়ার মৃত আব্দুল নূরীর ছেলে জমির উদ্দিন, পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, বানিয়াছড়া গ্রামের মৃত আব্দুন নবীর ছেলে জমিরউদ্দিন, টেকনাফ এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ, নারায়ণগঞ্জের ওলুপাড়া কাত্তাহকান্দার গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে বাবু, একই এলাকার মো. আকরাম হোসেন মিয়ার ছেলে মো. আমির হামজা, মাইনউদ্দিন, আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ঈমান আলী, আব্দুল গওহরের ছেলে গোলাপ হোসেন।
জামালপুরের কমলনগর গ্রামের ইউনুছ মোল্লার ছেলে শরীফ, আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ, হাতিগাড়া উপজেলার গকুল নগর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আজিজ, যশোরের মাহরুহা বেগম, কালিরবাজার এলাকার আলমগীরের ছেলে রাহুল, নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকার জসিম উদ্দিন মানিকের ছেলে মুন্না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন। এর ফাঁকে ফাঁকে হরতালের ঘোষণা আসছে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ রোববার ভোর থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল করছে তারা।
হরতাল-অবরোধে গাড়িতে আগুনে এবং পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে নিহতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। এছাড়া আগুনে পুড়ে ও বোমায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতাধিক মানুষ, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।