অনন্ত হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক, তাদের মধ্যে তিনজনই পলাতক।
Published : 12 May 2024, 11:44 PM
সিলেটে বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।
রোববার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্তিতে তার স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ দাবি জানান বক্তারা।
মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, প্রকাশক ও অধিকারকর্মীদের ওপর একের পর এক জঙ্গিবাদী হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে।
এরপর ওই এলাকায় প্রয়াত যুবনেতা মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের উদ্যোগে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর ১২ মে ওই স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন সিলেটের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ অনন্ত বিজয়ের সহযোদ্ধারা।
গণজাগরণ মঞ্চ, সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, অনন্ত হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর এই মামলায় রায় হয়। তবে রায় ঘোষণার দুই বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত রায় কার্যকরের কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া মামলার রায়ে চার জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তাদের তিনজন এখনও পলাতক
বক্তারা পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেন, অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা লোকদের হত্যার মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। তাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের স্বার্থেই এই হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সব আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যথায় জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেন তারা। সমাবেশে অনন্ত বিজয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তাকে হত্যার স্থানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও দাবি জানান বক্তারা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শাবিপ্রবির অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, পরিবেশ কর্মী আব্দুল করিম কীম, আশরাফুল কবির, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, অনন্তর ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর, লেখক ডা. এনাম আহমদ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী নিরঞ্জন সরকার অপু, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহবুব রাসেল, রাজীব রাসেল, দেবজ্যোতি দেবু, অরূপ বাউল, উ চক্রবর্তী, রনি দাশ প্রমুখ।
পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় গণজাগরণ মঞ্চেরও সংগঠক ছিলেন।
২০১৫ সালের ১২ মে সকালে বোনকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার দস্তিদার দিঘীর পাশে অনন্তকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।
সে রাতেই সিলেটের বিমানবন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন অনন্তের ভাই রত্নেশ্বর দাশ। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই হত্যা মামলার রায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, উপজেলার খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ। আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ছাড়া অপর তিন আসামি পলাতক।
এছাড়া বিতর্কিত ব্লগার সাফিউর রহমান ফারাবীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।