Published : 13 May 2024, 12:07 AM
তিন বছর পর সব বিষয়ে পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতি বছরের মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা গতবারের চেয়ে ভালো ফল দেখালেও তলানি থেকে উঠতে পারেনি সিলেট বোর্ড।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই বোর্ডে টানা তৃতীয়বারের মত দেশের নয় সাধারণ বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল এসেছে।
সাধারণ ৯ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে সারা দেশে গড়ে যেখানে ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, সবচেয়ে ভালো ফল করা যশোর বোর্ডে যেখানে ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, সেখানে সিলেটে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা দেশের সর্বনিম্ন।
সারা দেশে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪৯ হাজার ১৯০ জন পূর্ণ জিপিএ, অর্থাৎ পাঁচে পাঁচ পেয়েছে। সিলেট বোর্ডে এই সংখ্যা সারা দেশে সবচেয়ে কম, ৫ হাজার ৪৭১ জন।
আনুপাতিক হার বিচার করলে সারা দেশে উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঢাকায় এই হার ১৪ দশমিত ৩৬ শতাংশ। আর সিলেটে ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
এর আগে ২০২৩ ও ২০২২ সালেও সিলেট বোর্ডের অবস্থান ছিল সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে সবার নিচে।
২০২৩ সালে এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এর কারণ খুঁজতে গেলে বোর্ড কর্মকর্তা এবং শিক্ষকরা বললেন শিক্ষক স্বল্পতা, মানবিকের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্য এবং গণিত ও ইংরেজির দুর্বলতার কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবনে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
কোভিড মহামারীতে এসএসসি পরীক্ষার সূচি এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। চলতি বছর অনেকটা আগের ধারাবাহিকতায় ফিরেছে এই পাবলিক পরীক্ষা। এবার পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ সময় এবং পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হয়েছে।
১১টি শিক্ষা বোর্ডে ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী এবার মাধ্যমিক ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন পাস করেছে।
এর মধ্যে নয়টি সাধারণ বোর্ডে ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১০ হাজার ১১৩ জন এবার পরীক্ষা দেয়। সবচেয়ে কম ৮৮ হাজার ৮৫৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল বরিশাল বোর্ডে। আর সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা দেয় ১ লাখ ৯ হাজার ৫৮০ জন।
সার্বিক ফলাফলে এবার পাসের হার বাড়লেও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন।
এই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৪৪৯ জন।
হতশ্রী শ্রীহট্ট
মৌলভীবাজারের বড়লেখার দাসের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার পাসের হার ৬০ শতাংশের কম।
ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে মহামারীর প্রভাব, অর্থনৈতিক অসংগতি, শিক্ষক সংকটকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আমার শিক্ষক মাত্র ১৫ জন। এই যে শিক্ষকের সংকট, সেটার প্রভাব পড়েছে পরীক্ষায়।”
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সোনাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, “অভিভাবকরা চায় বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই আয় করুক। তারা ছোটবেলা থেকেই বিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চায়। অভিভাবকরা পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস না। অর্থনৈতিক সংকট, পড়ালেখা করে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বেকার থাকায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে।”
তিনি মনে করেন, ফলাফল ভালো করতে স্কুলগুলোতে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করা, তাদের সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই।
“পড়াশোনর যে বিকল্প নাই- সেটা অভিভাবকদের বুঝাতে হবে। শিক্ষক সংকটও নিরসন করতে হবে, নইলে সিলেট বোর্ড পিছিয়েই থাকবে।”
সিলেট বোর্ডের কর্মকর্তারাও পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে মহামারীর প্রভাব, শিক্ষক সংকট ও বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাকে দায়ী করছেন।
সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, “সিলেট বোর্ডে মানবিকের শিক্ষার্থী বেশি। মানবিকের শিক্ষার্থীরা গণিতে, ইংরেজিতে খারাপ করে।”
তিনি বলেন, এই বোর্ডে এবার সাধারণ বিজ্ঞান ও গণিতে খারাপ ফলের প্রভাব পড়েছে পুরো ফলাফলে।
চলতি বছর সিলেট বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে ৭৭ হাজার ৫৪৭ জন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৪ হাজার ১৫৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৭ হাজার ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবিকে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৮৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
অরুণ চন্দ্র পাল জানান, এবার সাধারণ বিজ্ঞানে ৮৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং গণিতে ৮৯ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
“অভিভাবকরা ভাবেন বিজ্ঞান পড়াতে গেলে তাদের বাড়তি খরচ হবে, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মানবিক বিষয়টি বেশি নেয়, গ্রামাঞ্চলে অভিভাবকরা বেশি খরচ করতে চায় না, তারা চায় বাচ্চারা কোনরকম পাস করুক।
“নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা অনেকেই এখানে থাকতে চায় না, এ কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব বরাবরই রয়ে গেছে সিলেট অঞ্চলে। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষক সংকট। বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও এখানে বেশি।”
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, “শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে। এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি বাড়াতে হবে।”
বোর্ড |
২০২৪ |
২০২৩ |
২০২২ |
|||
পাস (%) |
জিপিএ-৫ |
পাস (%) |
জিপিএ-৫ |
পাস (%) |
জিপিএ-৫ |
|
ঢাকা |
৮৩.৯২ |
৪৯,১৯০ |
৭৭.৫৫ |
৪৬,৩০৩ |
৯০.০৩ |
৬৪,৯৮৪ |
রাজশাহী |
৮৯.২৬ |
২৮,০৭৪ |
৮৭.৮৯ |
২৬,৮৭৭ |
৮৫.৮৮ |
৪২,৫১৭ |
কুমিল্লা |
৭৯.২৩ |
১২,১০০ |
৭৮.৪২ |
১১,৬২৩ |
৯১.২৮ |
১৯,৯৯৮ |
যশোর |
৯২.৩৩ |
২০,৭৬১ |
৮৬.১৭ |
২০,৬১৭ |
৯৫.১৭ |
৩০,৮৯২ |
চট্টগ্রাম |
৮২.৮০ |
১০,৮২৩ |
৭৮.২৯ |
১১,৪৫০ |
৮৭.৫৩ |
১৮,৬৬৪ |
বরিশাল |
৮৯.১৩ |
৬,১৪৫ |
৯০.১৮ |
৬,৩১১ |
৮৯.৬১ |
১০,০৬৮ |
সিলেট |
৭৩.৩৫ |
৫,৪৭১ |
৭৬.০৬ |
৫,৪৫২ |
৭৮.৮২ |
৭,৫৬৫ |
দিনাজপুর |
৭৮.৪৩ |
১৮,১০৫ |
৭৬.৮৭ |
১৭,৪১০ |
৮১.১৬ |
২৫,৫৮৬ |
ময়মনসিংহ |
৮৫ |
১৩,১৭৬ |
৮৫.৪৯ |
১৩,১৭৭ |
৮৯.০২ |
১৫,২১৬ |
মাদ্রাসা |
৭৯.৬৬ |
১৪,২০৬ |
৭৪.৭ |
৬,২১৩ |
৮২.২২ |
১৫,৪৫৭ |
কারিগরি |
৮১.৩৮ |
৪,০৭৮ |
৮৬.৩৫ |
১৮,১৪৫ |
৮৯.৫৫ |
১৮,৬৫৫ |
মোট |
৮৩.০৪ |
১,৮২,১২৯ |
৮০.৩৯ |
১,৮৩,৫৭৮ |
৮৭.৪৪ |
২,৬৯,৬০২ |
যশোরের সাফল্য কীভাবে?
এ বছর পাসের হারে শীর্ষে থাকা যশোর বোর্ড থেকে মানবিকের ১ লাখ ১ হাজার ৪৯১ জন, বিজ্ঞানে ৪১ হাজার ৪৬৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৯৬৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এ বোর্ডে মানবিকে ৯০ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহীন আহম্মদ বোর্ডের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা পদ্ধতিকেই সাফল্যের কারণ বলে মনে করছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা ২০১৬ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নিয়ে থাকি। শুধুমাত্র যশোর বোর্ড। অন্য বোর্ডগুলো নয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ডের প্রশ্নে আমরা স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে থাকি। আমাদের এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ প্রশিক্ষিত মাস্টারট্রেইনার আছেন। তারা চমৎকার মানসম্মত প্রশ্ন করে থাকেন।
“এই চর্চা অনুশীলন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করে দেন। এই প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের জড়তা ও ভীতি কমে গেছে। ফলে তারা নিঃশঙ্কভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।”
২০২২ সালেও ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষে ছিল যশোর বোর্ড। ২০২৩ সালে রবিশাল ও রাজশাহীর তুলনায় পিছিয়ে পড়লেও এবার আবার শীর্ষস্থান উদ্ধার করেছে যশোর।
জিপিএ-৫ কমল কেন?
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবার এই হার ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় গতবারের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার কমেছে বলে মনে করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।
সার্বিক ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “গতবারও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। এবার কিন্তু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে। সেই অনুযায়ী ফলাফল ভালো হয়েছে।”
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ গতবারের তুলনায় বেড়েছে।
চলতি বছর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ১৯০ জন শিক্ষার্থী।
গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ৪৬ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
তপন কুমার সরকার বলেন, “এবার ভালো হওয়ার পেছনে একটি কারণ হল, ছেলেমেয়েরা দুইবছর সময় পেয়েছে পড়াশোনা করার জন্য।
“আমাদের ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে ইংরেজি ও গণিতে নম্বর কম পাওয়ার বিষয়টিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ বছর আমাদের ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীরা গতবারের তুলনায় ভালো করেছে।”
ইংরেজি ও গণিতে কম নম্বর পাওয়ার কারণে অনেক সময় বোর্ডগুলো পিছিয়ে যায় বলে মনে করেন তিনি।
ভালো ফলের জন্য করণীয়
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ থেকে এবার ২ হাজার ৪১১ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। এই স্কুলে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ জন শিক্ষার্থী।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এমাম হোসাইন মনে করেন, ফলাফল ভালো করার জন্য শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রাখতে হবে।
“সারা বছর স্কুলে আসার অভ্যাস থাকতে হবে। স্কুলে আসলেই পড়ালেখা হবে। পড়াশোনার চর্চা অব্যাহত থাকতে হবে। মূল্যায়নগুলো রাখতে হবে। শিক্ষকদের ক্লাসে পড়াতে হবে।
“অনেক স্কুলেই ক্লাসে তেমন পড়াশোনা হয় না। এজন্য প্রধান শিক্ষকদের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং ছাত্রদের জ্ঞানদান করতে হবে। শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, তাদের অনেক দায়িত্ব। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের শিক্ষা দিতে হবে।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের মতে, ভালো ফলাফল নির্ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর।
সিলেট বোর্ডের পিছিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “নিশ্চয় ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের সেভাবে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। বোর্ড পরীক্ষা পরিচালনা করে। কিন্তু যাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাদের পরিচালনা করার দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সেখানকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার গুণগত মান।
“সেই হিসেবে ঢালাওভাবে কোনো বোর্ড ফলাফল খারাপ করে, এইভাবে চিন্তা না করে, কী কারণে ফল খারাপ করে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই তারা ভালো ফলাফল করবে।”
এ বছর মাধ্যমিকে ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি; শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৮টি।
গত বছর কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৮টি। আর ২ হাজার ৩৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল।
সে হিসেবে শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবার বেড়েছে ৬১৪টি, সব পরীক্ষার্থী ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৩টি।
শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানে বছরের শুরু থেকেই নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “সেই এলাকায় শিক্ষার্থী থাকবে কিনা, পাঠদান সম্ভব কিনা, সেখানে যাতায়াতের সুবিধা আছে কিনা- এগুলো না দেখেই নানা কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলাফল দেখেই শুধু ব্যবস্থা নেয়াটা ঠিক না, বছরের শুরুতেই এটা জানা যায় যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা কতুটুকু।
“তাদের সক্ষমতা না থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়।”
আরো পড়ুন
মাধ্যমিকে পাসের হার বেড়ে ৮৩.০৪%
এসএসসি: শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি
পাসের হারে শীর্ষে যশোর বোর্ড, জিপিএ-৫ এ ঢাকা
এসএসসি: মেয়েদের পেছনেই থাকল ছেলেরা