চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
Published : 11 Aug 2014, 10:57 AM
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেয়র আইভী সচিবালয়ে পৌঁছানোর পর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
তদন্ত কমিটি কেন ডেকেছে জানতে চাইলে সচিবালয়ের ফটকে আইভি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে উনাদের সঙ্গে কথা বলি, তারপর আপনাদের সঙ্গে বলব।”
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় একই স্থানে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত কমিটি।
৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার আগে সাংসদ শামীমের সঙ্গে টেলিফোনে তার কথপোকথনের একটি অডিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে নূর হোসেনের সঙ্গে ওই ফোনালাপের কথা স্বীকারও করেন শামীম। তবে তিনি দাবি করেন, একটি দৈনিক ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে’ ওই ফোনালাপের ‘আংশিক’ প্রকাশ করেছে।
এই তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যাদের মধ্যে র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারাও আছেন।
এ মামলার প্রধান আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা ভারতে যাবেন কি না জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম মো. মহীউদ্দীন রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি এখনো চিন্তা-ভাবনার পর্যায়ে আছে। তবে বেশি দেরি হলে আমাদের যাওয়া সম্ভব হবে না।”
আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে এই তদন্ত কমিটির। ইতোমধ্যে কমিটি হাই কোর্টে কয়েক দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সেটা তারা জানতে পেরেছেন। কি কারণে তারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এখন তা জানতে তদন্ত চলছে।
কমিটির সদস্য সচিব আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা প্রতিবেদন দাখিল করতে সক্ষম হবেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।
এই খুনের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন বলে সে সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সাত খুনের ঘটনায় র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এই তদন্ত কমিটি করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করবে কমিটি।
অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।