শামীম ওসমান যা বললেন

নারায়ণগঞ্জে সাতখুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে মোবাইল কথোপকথন প্রকাশের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

তন্ময় ইমরানতন্ময় ইমরানজনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2014, 07:57 PM
Updated : 23 May 2014, 08:46 PM

সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের পুরোটা নিচে তুলে ধরা হলো-

শামীম বলেন, “আমি কোন ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে আভিযোগ দেইনি। যে করাপ্টেড আমি শুধু তার বিরুদ্ধে স্পেসিফিক কথা বলেছি। আই এম নট স্টুপিড অ্যাট অল যে আমি ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলবো। একটা জাস্টিস যদি ভুল রায় দেয়, তার জন্য যদি সাতজন মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে যায়, তাহলে আমি বলতে পারবো না যে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট পুরোটাই রং।

“আমি এখানে কথা বলতে চাইছি রাফিউর রাব্বির জীবন নিয়ে কারণ আমার মনে হচ্ছে, কোন অন্যায় না করে গত দুই বছর ধরে আমি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছি। 

“আমি আপনাদের কাছে সাহায্য চাইছি। কারণ একটার পর একটা মানুষ আমার নিয়ে মেরে ফেলছে।”

প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রথম আলো কিন্তু এই কথা বলেনি-আমি নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। রিপোর্টটা হচ্ছে প্রথম আলোর।

“এই আডিও টেপটি- নূর হোসেন আমাকে ফোন করেছে, আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। সেটা তো আমি প্রথম আলোতেই বলেছি। কিন্তু এই পারসেপশনটি তারা তৈরি করেছে। প্রথম কথা হচ্ছে- প্রথম আলো আমি কিনে পড়ি না। প্রথমত পড়িনা এই কারণে যে, এই পত্রিকাটি রসুলে করিম (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয়ত পড়িনা এই কারণে যে, গণজাগরণ মঞ্চের নারীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য লিখেছিল। তৃতীয়ত, এখন এটি বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান জয় প্রথম আলো বর্জন করতে বলেছে, ১৯৭১ সাল নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কথা বলেছে তারা। গুন্ডে ছবি নিয়ে যখন এদেশের অনেকেই গলা ফাটাচ্ছিলো তখন প্রথম আলো এই কাজ করার পরও ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি।

“ইয়েস আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ওটা আমারই কণ্ঠ। নূর হোসেন আমাকে ফোন করেছিল। সে তার নিজের নম্বর থেকে ফোন করেনি। তার সাথে কথা বলেছিলাম। ঘটনা যেদিন ঘটেছে আমরা সেদিন সবাই, সবাই বলতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল থেকে প্লাস গভর্মেন্ট অল দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আমরা উপজেলা পরিষদে ওইখানে আমরা আইন-শৃংখলার মিটিংয়ে ছিলাম, ঘটনাস্থল থেকে ম্যাক্সিমাম হাফ কিলোমিটার দূরত্ব, একটু বেশি লোক ছিল এই কারণে যে, ওইদিন ওখানে একটি আফিস উদ্বোধন হয়েছে। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সবাই দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে একজন আসামি যার নাম ইয়াসিন সাহেব।

“এটা কিন্তু আমি নজরুলের পরিবারকে বলেছি নামটা দিয়ে আপনি মামলাটা দুর্বল করলেন। হি ওয়াজ প্রেজেন্ট অ্যাট দ্যাট টাইম। ওনারা আমাকে একথা বলেছেন, ভাই আমরা তো নামটা এই কারণে দেই নাই যে,  উনি কিলিং করেছেন। আমরা নাম দিয়েছি তারা অর্থের যোগান দিয়েছেন, দে আর দ্য প্ল্যানার।

“আমি এটা শুনে বলেছি, দ্যাটস ফাইন তাইলে ঠিক আছে। সেখানে একজন আইনের ছাত্র হিসেবে, আইনবিদ হিসেবে ও আইন প্রণেতা হিসেবে কে দোষী আমি পরে বলবো, একটা বিষয় তদন্তাধীন, তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে তদন্ত করেছেন কি না এটা বিচার করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। বিচার বিভাগ যখন কাউকে অপরাধী বলবে, গণ্য করবে, তার আগে আমি কাউকে অপরাধী বলতে পারি না, বলতে চাই না, উচিতও না, সভ্য সমাজে।”

প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট। টেলিফোন ট্র্যাকিং তো আমার মতো পলিটিশিয়ানরা করতে পারেন না। এটা গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট। যে গোয়েন্দা সংস্থা করেছেন আমি তো বুঝি, আর আমার টেলিফোন যে সবসময়ই রেকর্ড হয় তাও বুঝি। আমি বুঝেই কিন্তু কথা বলি, না বুঝে বলি না। ঘটনার দিন আমরা যখন আড়াইটার সময় মিটিং শেষ করে আসছি, যখন নজরুলের শ্বশুর ও তার সমস্ত পরিবার আমার কাছে এসে বলেছে, ভাই আপনি নূর হোসেনকে ডাকেন। আমি ডাকিয়েছি।

“তার আগের দিন নজরুল আমার বাসায় এসেছিল। আমাকে বলেছে, প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার নামও বলেছে যে সে তাকে বলেছে যে, এই এলাকায় এই ১৫টা স্পটে ড্রাগসের ব্যবসা হবে, ইউ হ্যাভ টু কন্ট্রোল ইট। এখন এটার কোনো প্রমাণ নেই। কারণ নজরুল ইজ নো মোর। এবং তুমি এটা দেখবে। ও বলছে- আমি পলিটিক্স করি। ও ছাত্রলীগ করা ছেলে, ছাত্রলীগ থেকে আস্তে আস্তে উঠতে উঠতে উঠতে এ জায়গায় আসছে। ও আমার হাতে গড়া ছেলে। ওরা নাকি বলেছে পাঁচ লাখ দিবা এই এলাকায় যা ইচ্ছা তা করবা। ভাই আমাকে সাহায্য করেন। আমি তখন বলেছি, তুমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত করো। এর আগেও বলেছি, দুইবার তিনবার-সে দরখাস্ত করেছে। এরপরেও যখন সাহায্যের কথা বলেছে তখন আমি নিজেকে একজন অসহায় সংসদ সদস্য ভেবেছি। কারণ আমার কিছু করার ছিলো না। আমি তখন তাকে বলেছি নজরুল আমার কিছু করার নেই। আই ক্যান নট সেভ ইউ।

“নজরুলের ভাই এসেছে আমার বাসায়, ওর বউ এসেছিল আমার বাসায়। ওর বউকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি, সেও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে ভাইয়া কি করবো? আমি তাকে বলেছি, মা রে তুমি কি চাও? স্বামী চাও, না নেতা চাও; ওর ছোট ভাই সালাম ওটাও আমার আদরের আমাকে বলেছে, ভাই একদিনের জন্য যদি যায়, দুইদিনের জন্য যদি যায়, আমি বলেছি এক থাপ্পড় দিবো।

“আমি নজরুলকে বলছি, দ্যাখো বেঁচে থাকলে সব হবে, মরে গেছে কিছু হবে না। একটা বিশেষ শ্রেণির লোক যারা আমাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে গত দুইটা বছর ধরে এসব করছে, আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করার জন্য করছে, আমি তাদের থেকে শক্তিশালী নই, আমি দুর্বল।”   

র‌্যাবের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ তুলে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, “আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আমার র‌্যাংক ইজ লাইক অ্যা মেজর জেনারেল, তার র‌্যাংক ইজ মেজর, হি থ্রেট মি। আমি না বাচঁলে আপনিও বাঁচবেন না। আমি তাকে সেকেন্ডের মধ্যে প্রশ্ন করি, হোয়াট। সে বলে- আমি না বাঁচলে আপনিও বাঁচবেন না। তারপর বলেছে, আপনারাও বাঁচবেন না। বাঁচা মরা তো আল্লাহর হাতে। আমি বুঝেছি, এদেশে একজন জনপ্রতিনিধির অবস্থান কতো দুর্বল। দেন আমি শহীদ চেয়ারম্যানকে বলেছি, আপনি কেন এরকম বক্তব্য দিচ্ছেন, রাগও করেছি, কারণ আমি বুঝতে পেরেছি এখানে একটি গেম চলছে।

“আমার কথা হচ্ছে এই তদন্তকারী কর্মকর্তাই তো গত দুবছর ধরে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। বারবার পারসেপসন তৈরি করছে। চার্জশিট হয় না, তার আগেই পত্রিকা চার্জশিট ছাপিয়ে দিচ্ছে, রেকর্ড হয় আমার ভয়েস রেকর্ড হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সজীব ওয়াজেদ জয় যিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা উনি বলছেন একটি দেশের যুবসমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, বয়কট প্রথম আলো।”

প্রথম আলোকে মোবাইল কথোপকথনের তথ্য সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, “তাহলে এটি কোন তদন্ত বিভাগ, কোন ইনকোয়ারি বিভাগ, যারা এটি (ফোন রেকর্ড) জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক বা অন্য কোন পত্রিকায় না দিয়ে প্রথম আলোতেই দেয়?

“কারা এরা, এরা কি চায়, এরা কি সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়? নাকি আমাকে মারতে চায়?

ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর নিজের কর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, “আমার সামনে কাগজপত্র রয়েছে-রফিউর রাব্বি তার ছেলে ত্বকীকে মারা হয়েছে, প্রথমে দাবি করেছি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। এ কারণে সাতমাস আটমাস ধরে একেকটা ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে। এখনো একটা ছেলে আছে ভেতরে। মনে হয় তাকে মেরে ফেলেছে, কিংবা বেঁচে আছে কি না জানি না, হাত পায়ের নখ তুলে ফেলেছে। সিআরপিসির কোথায় আছে, একজন আসামিকে আমি ধরে নিয়ে যাব, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাজির করার নিয়ম। সে আসামি তখনই হবে যখন তা প্রমাণ হবে। এবং সে কনফেস করছে। তারপর সে বলছে, আমার হাত এই হয়েছে, পা এই হয়েছে আমাকে এভাবে মারা হয়েছে তাই আমি কনফেস করতে বাধ্য হয়েছি।    

“আমি ত্বকি হত্যার মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছি না। আমি বলছি, আরো তদন্ত হোক প্রয়োজনে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, নো প্রবলেম- কোন আপত্তি নেই, বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক কিংবা সৎ অফিসার দিয়ে তদন্ত হোক।”  

তিনি বলেন, “এই প্রেস কনফারেন্সটা আমার করার কথা ছিল আগামী পরশুদিন যেহেতু কালকে আমার ভাইয়ের একটা শোকসভা। নাগরিক শোকসভা। আমি ওইটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।   

“আমার রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ আমি আমার কর্মীদের বাঁচাতে পারি না। আমার কষ্ট ছেলেটা আমার কথা শুনেছে। কথা শুনে নজরুল তিনটা মাস ও কিন্তু আর যায় নাই এলাকায়। এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়ে ও একদিনের জন্য তিনটা মাসে এলাকায় যায় নাই।

“গেল ওইদিন এক মামলায়, আমি ওই থানার ওসিকে বললাম ওর সামনেই ফোন করে, ভাই মামলাটা মিথ্যে। মতিন সাহেব ওই ওসির নাম। তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বলছেন।

“তখন ও বললো, ভাই আমার বিরুদ্ধে তো ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে। আমি তখন বললাম গো টু দ্য কোর্ট, টেক দ্য বেল। সঙ্গে লোকজন নিয়ে যেও। তারপর সে গেল-সে জামিন পেয়েছে। তার সাথে কিন্তু আরো ২০-৩০ জন ছেলে, সে একা না এবং নজরুল সাহসী ছেলে। রাজপথের থেকে উঠে আসা।”

এসময় এক সাংবাদিক বলেন, আপনি এটা তো আগেও বলেছেন।

জবাবে শামীম ওসমান বলেন, “আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। আসল জায়গায় আসতে হবে। কারণ যারা টেপটা ছেড়েছে তারা নিজেরা বাঁচার জন্য টেপটা ছেড়েছে। এখন আমি কথা বলছি, কাল আমি বাঁচবো কি না জানি না। আমাকে আমার মতো বলতে দেন।

“সেখানে কোর্টে একজন লোক তাকে ফলো করেছিল। ধরা পড়ার পর বের হয়েছে সে র‌্যাবের লোক। তার কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে। তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল। শোনা যায়, সে নাকি কাকে ফোন করে বলেছিল, দুইটা এক্স করোলা যাচ্ছে, এখন আমাদের অ্যাডভোকেট    

চন্দনদার গাড়িও এক্স করোলা। দুই গাড়িই এক্স করোলা, এখন বাদী পক্ষের ক্লেইম অনুযায়ী, র‌্যাব, যারা ভিকটিম আরকি তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমি ওই এরাকার পাগল কুকুরটাও চিনি। আই অ্যাম নট স্টুপিড অ্যাট অল যে আমার কাছে খবর আসবে না ১০ মিনিটে যে দুই দুইটা গাড়িতে কারা লোক উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু মানুষ ভয় পায়, এ কারণে যে চন্দন সাহেবের মতো লোক, য়িনি জীবনে উঁচু গলায় কারো সঙ্গে কথা বলেননি, একটি নিরীহ, ভদ্র মানুষের যদি প্রতিবাদ করার কারণে, দেখে ফেলার কারণে এই পরিণতি হয়, তাহলে কেউ কথা বলতে আসবে না।”

শামীম বলেন, “র‌্যাব আমাকে কথা দিয়েছিল, ওকে ফিরিয়ে দেবে। মানে ওকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমি নজরুলের ফ্যামিলিকে বললাম, একটু দেরিতে কেস করো। ২৮ তারিখে আমার একজন র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো, নাম কোড করছি না। উনি বললো, আই হোপ আমরা তাকে জীবিত উদ্ধার করবো। আমি কিন্তু হানড্রেড পার্সেন্ট কনফার্ম ছিলাম সে জীবিত থাকবে। বিকজ সাতটা মানুষ তো। একজন হলে আমি কোন আসাই করতাম না। কিন্তু সাতজন মানুষকে মেরে ফেলবে এটা আমার কল্পনা, এমনকি চিন্তাতেও আসেনি। আপনাদেরও আসেনি। এমনকি কোন বিবেকবান, সভ্য মানুষের পক্ষেও এটি ভাবা সম্ভব নয়। ইভেনচুয়েলি প্রশ্নও আসে না। ২৯ তারিখ আমি নজরুলের পরিবারের চাপে নূর হোসেনকে ডেকে নিয়ে আসলাম তখন নজরুলের শ্যালক আমার সামনে বসা। আমি তার সামনে তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, নজরুল কোথায়? হোসেন দ্যাখো নজরুল কোথায়? আমি জানি হোসেনের পক্ষে এতোগুলো লোক ওঠানো সম্ভব না। ও টাকা কামায় ইলিগাল ওয়েতে, লোক পালে, কিন্তু এতো বড়ো মাস্তান ও না। ও নিজে এতো বড়ো গুণ্ডা না, এতো সাহসী লোক সে না। সে আমার ওপর ক্ষেপে গিয়েছে। বলেছে, ভাই আপনি আমাকে এই প্রশ্ন কেন করলেন? ওখানে নারায়ণগঞ্জ পেপারস অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিসহ সাতজন সিনিয়র সাংবাদিক ছিলেন, আরো ৫০ জন গণ্যমান্য লোক ছিল, এমনকি নজরুলের শালাও ছিল। নূর হোসেন আমাকে উত্তর দিয়েছে, আপনি এমপি হওয়ার পর আমার ক্ষমতা নেই, এর আগে আমার ছিল। যখন ছিল তখন নজরুলকে তো রাস্তায় গুলি করে মারতে পারতাম। আমি নজরুলকে উঠাবো কেন? আমি নূর হোসেনকে বললাম, ঠিক আছে খোঁজার চেষ্টা করো ভাই। আমার কাজটা কি? আপোষে হোক, বুঝায়ে হোক, ধমকায়ে হোক ওকে বের করা।

“তখন আমি ভাবতাম যে, নূর হোসেন আমার কথা শুনবে, ধারণা ছিল। যাই হোক আমি তাকে এর আগে বহুবার ওয়ার্ন করেছি, তুমি যাদের সঙ্গে কাজ করছো এরা কিন্তু একটা সময় তোমাকে দেখবে না কেউ। দে উইল বি ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন। স্টপ ইট। সে উত্তর দিয়েছে তাদের কথা না শুনলে আমি বাঁচবো না।

“এরপর আমি র‌্যাবের সিও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবাইকে ফোন করলাম। দেন আমি রাতের বেলায় ঢাকা আসলাম। ২৮ না ২৯ তারিখে মনে নেই। তবে (সাংবাদিকের দিকে ইঙ্গিত করে) উনি যেহেতু বলছেন ২৯ তারিখে হয়তো ওইদিনই হবে। এর মধ্যে আমার ফোনে একটা কল এলো। আমি যেহেতু সবার ফোনই ধরি, রাত ১টা পর্যন্ত জেগে থাকলেই ফোন ধরি। তো ফোনটা ধরলাম, জিজ্ঞাসা করলাম কে? বললো, হোসেন।

“এরমধ্যে (প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া কথোপকথন) পুরোটা নেই, কিছু কাটা আছে, পুরো ব্যাপারটা সাজানো। আংশিক ছাপা হয়েছে, আংশিক হয়নি। কিংবা এডিটিং করেছে।”

শামীম ওসমান বলেন, “আমাকে দুজন পুলিশ অফিসার বলেছিল, শামীম ভাই ওকে (নূর হোসেন) বলেন ও যদি এর মধ্যে জড়িত না থাকে তাহলে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুক।

“তো আমি ফোনে ওকে বুঝালাম, তোমার তো অনেক টাকা পয়সা। বাংলাদেশের সেরা ল ইয়ার আছেন- বাসেতুল্লাহ সাহেব আছেন, খন্দকার মাহবুব উদ্দিন সাহেব আছেন। এ ধরনের সিনিয়র ল ইয়ার আছেন তুমি যাও ওইখানে। আমি বলে দিচ্ছি, গো অ্যান্ড কোর্টে সারেন্ডার করো। যখন তুমি কোর্টে স্যারেন্ডার করবে তখন তোমাকে কেউ মেরে ফেলতে পারবে না। কারণ আমার একটা ভয় ছিলো ওকেও তো মেরে ফেলতে পারে। যেটা নজরুলের শ্বশুরের কথা, আমি হোসেনকে জীবিত চাই। তাহলে সর্ষের ভেতরের ভূত কারা কারা তা বেরিয়ে আসতো।

“তো ও বললো ব্যারিস্টার ‘গৌর’ কিংবা ‘গোপাল’ কারো কাছে যাবে। আমি বললাম, তো তুমি তোমার গোরদার কাছেই যাও। আমি যে সাজেশন দিচ্ছি তুমি সেটাই করবা। এরপর আমি জানার চেষ্টা করলাম তোমার পাসপোর্টে কি ভিসা আছে? এটা তো আমার জানতে হবে, আমি জানি আমার পার্টির হাই কমান্ড থেকে জিজ্ঞাসা করা হবে, ও কোথায় আছে। প্রথমে কিন্তু অস্বীকার করেছে। তারপর সে আমার কাছে স্বীকার করেছে, ইন্ডিয়ার ভিসা আছে। তার মানে লিগ্যাল ওয়ে তে যদি ও কোন দেশে যায় তাহলে ও ভারতে যাবে।”

মোবাইল কথোপকথন রেকর্ড করা হলেও নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শামী ওসমান বলেন, “র‌্যাবের এডিজিও বলেছেন ও ইন্ডিয়ায় আছে। তো আমি উনার কথা বিশ্বাস করবো, কারণ উনারা তো আমার কথা ছেড়ে দেন রেকর্ড করে, ওনাদের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। আমার কথা হচ্ছে, এই আধুনিক লোকগুলো আমি দেখলাম চ্যানেল চব্বিশে তারা বলছেন, নূর হোসেন যখন আমাকে ফোন করেছেন তখন সে গুলশানে ছিল। ঘটনার আগের দিন ছিল ধানমন্ডিতে তারা তাকে কেন ধরলো না?”

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপনির্বাচনে রফিউর রাব্বির প্রার্থী হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “আমি কালকে অডিট, ডিসি, এসপি সাহেব এবং আজকে সমাজের সামনে বলছি, আমি ভাবছিলাম রফিউর রাব্বি ইলেকশন করবেন না। উনি যদি করতে চান তাহলে মোস্ট ওয়েলকাম। তাহলে আমার একটা সুযোগ থাকে, আমাদের পরিবার থেকে আমরা কেউ রাজনীতি করতে চাচ্ছি না। আমি জানি আপনারা ভাবছেন এমপি ইলেকশন নিয়ে আপনারা আবার খেলছেন। নো উই আর নট ইন্টারেস্টেড।

“আমার কিছু দাবি দাওয়া আছে- আমার একটা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করার ইচ্ছা আছে, আমি কথা দিয়েছিলাম জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে। এগুলো যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলে কালকেই হয়ে যাবে। আই উইল রিজাইন। একদম অনেস্টলি বলতেছি, আই অ্যাম টায়ার্ড, রিয়েলি টায়ার্ড। এটা কোনো পার্টির সিস্টেম হতে পারে না আমার দলের।”

রাব্বির বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ তুলে শামীম ওসমান বলেন, “রফিউর রাব্বি সাহেবের কাছ থেকে, আমি কালকেই ব্যাংকের কাগজ পেলাম, ওনার কাছ থেকে ব্যাংক ১৯ কোটি ৪৯০ লাখ টাকা পায়। ওনার আরেকটা গার্মেন্টসের মেশিন নাই পত্তর নাই, গার্মেন্টসই নাই- ওটার অ্যাগেইনস্টেও উনি ঋণ নিয়েছেন। সেটা নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হচ্ছে, ফোর  টোয়েন্টির মামলা হচ্ছ। চেক জালিয়াতির মামলাও উনার আছে। যাক আমি উনাকে খাটো করছি না। এটা যে কোন সাধারণ মানুষ বোঝে, ব্যাংক ডিফল্টার ক্যান নট ডু দ্য ইলেকশন। এটা উনিও বোঝেন ইলেকশন উনি করতে পারবেন না। দুটো কারণে উনি করতে পারেন একটা হচ্ছে স্ট্যান্টবাজি এবং চাপাবাজি। স্ট্যান্টবাজি করার উনার দরকার নেই। কারণ উনি সবার কাছ থেকে শ্রদ্ধা পায়, কারণ উনার ছেলে মারা গেছে।

“তাহলে আমার ভয়টা হচ্ছে, এখানে এই শক্তি সেভেন মার্ডার, এই ঘটনাগুলিকে, যতোটুকু আমি বুঝি তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এমনও তো হতে পারে রফিউর রাব্বি সাহেবকে নির্বাচনের নাম করে কেউ দাঁড় করালো তারপর বললো, ওকে ফাইন। উই উইল ফাইন্যান্স ইউ, তুমি দাঁড়াও আমরা আছি তোমার পাশে। তারপর দেখা গেল তিনি কালকে ‘নাই’। আল্লাহ মাফ করুক যদি রফিউর রাব্বি কালকে নাই হয়ে যায়, আমি যদি চিৎকার করে কালকে সবার কাছে বলি, সাংবাদিক সমাজের কাছে বলি আমাকে কিন্তু প্রমাণ করতে খুব কষ্ট হবে যে আমি এর সঙ্গে নেই। তাই আমি সাংবাদিক ভাইদের কাছে, জাতির বিবেককে সাক্ষী রেখে বলছি- তাকে কমপ্লিটলি প্রটেক্ট করা হোক।”