দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদ আগামী বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন।
Published : 22 Apr 2013, 10:31 AM
তিনি সোমবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার শপথ অনুষ্ঠান হবে বলে আমরা আভাস পেয়েছি।”
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের সচিব মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত স্পিকার (ডেপুটি স্পিকার) শওকত আলী শপথ পাঠ করাবেন।
তিনি জানান, আগে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়াতেন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এই দায়িত্ব স্পিকারের ওপর এসেছে।
৬৯ বছর বয়সী আইনজীবী আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি পদে মো. জিল্লুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ মারা যান।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর স্পিকার হামিদই দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিশোরগঞ্জ থেকে সাত বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দফা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সকালে একমাত্র প্রার্থী আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নতুন রাষ্ট্রপতি আগামী পাঁচ বছর অর্থাৎ পরবর্তী সরকার আমলেও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকবেন।
সিইসি বলেন, “একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করছি।”
পরে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সংসদের স্পিকার পদ ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসন শূন্য হয়ে যাবে বলে জানান সিইসি।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ।
আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
দেশের ১৯ তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার কারণে গত ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আবদুল হামিদ।
জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে, যাতে ২৯ এপ্রিল সংসদে ভোটের দিন রাখা হয়। তবে প্রার্থী মাত্র একজন হওয়ার ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।
রোববার মনোনয়নপত্র দাখিলের ধার্য দিনে জাতীয় সংসদ ভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল হামিদকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কার্যত তখনি আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সেই হিসোবে আবদুল হামিদ হচ্ছেন দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি।
১৯৯১ সালের পর আবদুর রহমান বিশ্বাস ছাড়া অন্য সব রাষ্ট্রপতিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।