ভোট বর্জন করে ফের বিএনপির ‘আত্মহত্যা’: হাছান মাহমুদ

“বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন-কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন," বলেন তিনি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ‘আত্মহননমূলক রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার পাঁচ দেশ সফরের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন তিনি। ২৪ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত এসব দেশ সফর শেষে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত তারা দেশের সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এমন কি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে আমার প্রশ্ন-কোনো নির্বাচনেই যদি অংশ নিতে পারেন, তবে আর কেন বিএনপির রাজনীতি করবেন।"

উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হলেও বিএনপি কেন ঢাকা শহরে লিফলেট বিতরণ করছে- এ প্রশ্নে হাছান বলেন, "এগুলো তাদের লোক-দেখানো কর্মসূচি। কখন যে তারা উপজেলা নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরণ করতে দূতাবাসগুলোতে চলে যায়, সেটিই দেখার বিষয়, কারণ তারা তো কথায় কথায় বিদেশি দূতাবাসে ধর্ণা দেয়।"

সাংবাদিকরা এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, “শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ইউরোপজুড়ে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে, হচ্ছে।

”আর আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে হিরো আলমকে বা কোনো মেয়র পদপ্রার্থীকে কেউ ঘুষি মারলেও তারা বিবৃতি দেয়, আর তাদের ওখানে বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ যেভাবে বলপ্রয়োগ করছে, হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, শিক্ষকরাও রেহাই পাচ্ছেন না- এ নিয়ে তারা কি বলবেন সেটিই আমার প্রশ্ন।"

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

এদিন দুপুরে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাজ্যের যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যান ম্যারি ট্রেভেলিয়ান মন্ত্রণালয়ে হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এ বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “অ্যান ম্যারি ট্রেভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়য়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, মেট্রোরেলেও ভ্রমণের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।”

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরে সফররত প্রতিমন্ত্রী দু'দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণে জোর দিয়েছেন বলে তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ।

বৈঠকে পূর্বসম্মতির ভিত্তিতে এয়ারবাস কেনা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পাঁচ দেশ সফর

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৪ থেকে ২৭ এপ্রিল থাইল্যান্ড সফর শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৮ এপ্রিল দুই দিনের সফরে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা যান। সেখানে তিনি ‘হিউম্যানিটি অ্যাট দ্য ক্রসরোডস: অটোনোমাস উইপনস সিস্টেমস অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব রেগুলেশন' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন।

পাশাপাশি অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানো ও দ্বৈত কর এড়ানোর প্রস্তাবিত চুক্তি দ্রুত সই করা নিয়ে আলোচনা করেন।

সফরকালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয় উদ্বোধনের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পরে ৩০ এপ্রিল দুই দিনের জন্য বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাছান মাহমুদ।

এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও জোটের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

এরপর ৩ থেকে ৫ মে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে ১৫তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনে ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে, আমরা তাদের সহায়তা দিচ্ছি। ওআইসি সম্মেলনের সমাপনীতে আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় সহযোগিতার জন্য ওআইসি সদস্যদেরকে আহ্বান করেছি।“

ব্রিফিংয়ে সম্মেলনের অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১০ জন মন্ত্রী ও সংস্থাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ।