পদ্মাপাড়ে মঞ্চ প্রস্তুত, মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা

প্রমত্তা পদ্মার বুকে নতুন স্বপ্নের উন্মোচনের মঞ্চ প্রস্তুত, পুরো বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, কখন আসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঘোষণা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 02:59 AM
Updated : 25 June 2022, 03:54 AM

শনিবার সকালে দেশের সবচেয়ে বড় এ যোগাযোগ অবকাঠামোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে চলাচলের জন্য। পদ্মার দুই তীরের পাশাপাশি সারা দেশে তাই উৎসবের সাজ।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেখানে হবে, ইতোমধ্যে সেই সুধী সমাবেশ স্থলে পৌঁছে গেছেন সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের অধিকাংশই।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পৌঁছে সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।  

সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেল করে অতিথিদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে। মঞ্চে রয়েছে চারটি চেয়ার। দুই পাশে দুটো ডায়াস আর তার দুটো জায়ান্ট স্ক্রিন। এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, অন্য পাশে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত পদ্মা সেতু। সেতুর ল্যাম্পপোস্টের গায়ে এঁটে দেওয়া হয়েছে নানা রঙের পতাকা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সেতুর উদ্বোধন ঘোষণার পর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন সরকারপ্রধান। তারপর টোল দিয়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু দিয়ে পদ্মা পার হয়ে যাবেন শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

সেখানে তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন। দুটো ভলবো বাসে করে ঢাকা থেকে আসা সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর বহরের সঙ্গে পদ্মা সেতু পার হবেন।

এরপর পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। যেখানে ১০ লাখ লোক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে মানুষ সেখানে আসছে সকাল থেকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে সাজানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে। মাওয়ায় যে সুধী সমাবেশ হবে, তা মূলত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। আর নদীর ওপারে যে বিশাল জনসভার আয়োজন হয়েছে, তা হবে দলীয় উদযাপন।

তাতে যোগ দিতে দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছেন পদ্মাপাড়ে। তাদের সঙ্গে আসছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি।  

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হাজার হাজার ফেস্টুনে ভরে গেছে। টোল প্লাজা থেকে পাঁচ্চর পর্যন্ত পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে দেড় ডজন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। 

এ স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; এরপর বহু পরিকল্পনা, শ্রম আর তিতিক্ষা, অনেক বিতর্ক, টানাপড়েন আর অপপ্রচার, দীর্ঘ চ্যালেঞ্জ আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব।

এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে- তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, এ সেতুর বাস্তবায়ন বিশ্ব দরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সাথে ‘মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস’ এনে দিয়েছে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল।”

ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত- ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’- এই চিরপ্রেরণার বাণীতে উজ্জীবিত হয়ে আমরা প্রমাণ করেছি আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা।”

সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু অনন্য অবদান রাখবে।

সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।

“সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।”

যা মানতে হবে

পদ্মা সেতু ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা’ বলে সেতু পারাপারে কিছু নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

যার মধ্যে আছে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, এর বেশি গতিতে গাড়ি চলতে পরবে না।

সেতুর ওপর যানবাহন দাঁড়ানো এবং যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। থ্রি হুইলার (রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোরিকশা), হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি দিয়ে সেতু পার হওয়া যাবে না।

৫.৭ মিটারের চেয়ে বেশি উচ্চতার মালবাহী কোনো গাড়ি নিয়ে সেতু পার হওয়া যাবে না। তাছাড়া সেতুর ওপর ফেলা যাবে না কোনো ময়লা।

আর  কোভিড সংক্রমণ বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, “জনসভাস্থলে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি, সারা দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে যারা জনসভাস্থলে আসবেন করোনার যে নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলো সবাইকে মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।”

আরও পড়ুন