সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা।
শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। পরে সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করে টোল দিয়ে সফরসঙ্গীসহ পদ্মা সেতু পার হবেন।
এরপর ওপারে গিয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ঘাটে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি।
মাদারীপুর থেকে রিপনচন্দ্র মল্লিক জানাচ্ছেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী জনসভাকে ঘিরে এক্সপ্রেসওয়ে অসংখ্য ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হাজার হাজার ফেস্টুনে ভরে গেছে।
এ ছাড়া টোল প্লাজা থেকে পাঁচ্চর পর্যন্ত পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে দেড় ডজন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তোরণ, ফেস্টুন ছাড়াও ঘাট ও আশেপাশ এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, বড় আকৃতির ফেস্টুনের ছড়াছড়ি।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, জনসভাস্থল বাংলাবাজার ঘাট এলাকা, পদ্মাসেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক, পাঁচ্চর থেকে আড়িয়াল খাঁ সেতু এলাকার এক্সপ্রেসওয়েতে সারিবদ্ধ ফেস্টুন লাগানো।
এক্সপ্রেসওয়ে ছয় হাজারেরও বেশি ফেস্টুন, কয়েক হাজার বড় বড় ব্যানার টাঙানো হয়েছে জনসভাস্থল এবং এক্সপ্রেসওয়েতে। এছাড়া শিবচরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য পোস্টার। বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডার, জনসভাস্থলসহ দুপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
শিবচর উপজেলা পরিষদ ভবন, বিভিন্ন সরকারি অফিস, হাট-বাজার, বিভিন্ন এলাকার ভবনসমূহ আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। শুধু শিবচরেই নয়, পুরো মাদারীপুর জেলাতেই ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। কোথাও কোথাও বানানো হয়েছে গেট।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
মাদারীপুর পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “ঘাট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা রয়েছে। আমরা এসএসএফ-এর সাথে সমন্বয় করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। জনসমাবেশে নির্বিঘ্নে জনসাধারণ আসতে পারবে।”
এদিকে, বাংলাবাজারে জনসভায় শুধু মাত্র মাদারীপুর জেলা থেকেই তিন লাখের বেশি মানুষ সমবেত করার কাজ করছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
“দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে দশ লাখের বেশি লোকের সমাবেশ হবে। এই সমাবেশকে সফল করতে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠন ও প্রতিটি ইউনিট কাজ করছে।”
কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, “জনসভায় জেলার শিবচর উপজেলাসহ পুরো জেলা থেকে তিন লাখ লোকের বেশি উপস্থিতি হবে বলে আশা করছি।”
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, “জনসভা সফল করার জন্য আমরা রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি।”
শরীয়তপুর শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, নিশান, তোরণের পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
এ ছাড়া সমাবেশে লাখো জনতার সমাশেরও আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে জেলা শহরসহ ছয়টি উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ এক লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার হাসানুজ্জামান খোকন জানান, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পাদ উপ-মন্ত্রী একে এম এনামুল হক শামীমের নিদের্শনায় জেলার নড়িয়া ও সখিপুর থেকে ৮টি বিলাসবহুল লঞ্চ ও পালতোলা নৌকাসহ দুইশত ট্রলার যাবে জনসভাস্থলে।
লঞ্চ, পালতোলা নৌকা ও ট্রলারের ভাড়া এবং ২৫ হাজার নেতাকর্মীর খাবারের ব্যয় উপ-মন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীম বহন করবেন বলে খোকন জানান।
এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে লোকজন যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ আনন্দযাত্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন। এই ২০ হাজার নেতাকর্মীর খাবারের ব্যয় বহন করবেন সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু।
জেলা যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুল রশিদ গোলন্দাজ জানান, সমাবেশে পালং ও জাজিরার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া ডামুড্যা উপজেলা থেকে ২টি লঞ্চ, ১০টি বড় ট্রলার, গোসাইরহাট উপজেলার থেকে ৩টি লঞ্চ ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১০টি বাস, ১০টি মাইক্রোবাস ও ট্রাক যাবে জনসভাস্থলে। তাতে প্রায় ১৫ হাজার লোক হবে।
সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, “স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ সফল করতে আমরা শরীয়তপর থেকে প্রায় ১ লাখ নিয়ে আমরা জনসভাস্থালে যাব।”
মুন্সীগঞ্জ থেকে ফারহানা মির্জা জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষে এখন পদ্মার দুই পাড়ে চলছে উৎসব আয়োজন। উদ্বোধন ও জনসভাকে কেন্দ্র করে উভয়পাড়ে নানা স্থাপনায় বর্ণিল সাজ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও সাজসজ্জা করা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উভয়পাড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।