নিরাপদে ইউক্রেইন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আশায় রাশিয়া সীমান্ত লাগোয়া মারিওপোল থেকে কিয়েভে এসেছিলেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আহমেদ ফাতেমী রুমি এবং তার চার সহপাঠী। কিন্তু তাদের অবস্থা হয়েছে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ার মত।
Published : 25 Feb 2022, 07:43 PM
“একটু পরপর সাইরেন বাজছে আর আমরা ছুটে বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছি। আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। জানি না ভাগ্যে কী আছে,” বলছিলেন।
শুক্রবার হোয়াটসঅ্যাপে যখন রুমির সঙ্গে কথা হচ্ছিল, আতঙ্কে চড়ে যাচ্ছিল মারিওপোল স্টেট ইউনিভার্সিটিরর এই শিক্ষার্থীর কণ্ঠ।
ইউক্রেইনের বন্দর নগরী মারিওপোল দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। ওই জেলার বেশ কিছু অংশ রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে সেই ২০১৪ সাল থেকে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সেনাবাহিনী যেসব এলাকা দিয়ে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করে দোনেৎস্ক তার একটি।
সে কারণে রুমি ও তার বন্ধুরা মরিয়া হয়ে মরিওপোল ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কিয়েভ হয়ে কোনোভাবে নিরাপদ কোনো সীমান্তে চলে যাওয়া।
রুমি জানান, মারিওপোল থেকে কিয়েভের দূরত্ব প্রায় ৭৮৩ কিলোমিটার। অনেক ঘোরাঘুরির পর তারা ট্রেনের টিকেট পান। সেই ট্রেনেই শুক্রবার চার বন্ধুর সঙ্গে কিয়েভে পৌঁছান।
রুমি বলেছিলেন, “এত আতঙ্কে আর থাকতে পারছি না। তাই কিয়েভ চলে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে চেষ্টা করব নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে।”
তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয় বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে। হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে তিনি জানান, আরো ঘণ্টাখানেক পর তারা কিয়েভে পৌঁছে যাবেন বলে আশা করছেন।
কিন্তু কিয়েভে পৌঁছে যে পরিস্থিতি দেখলেন, সেজন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না রুমিরা। ট্রেন থেকে নেমে বুঝতে পারছিলেন না, এরপর কী করবেন। খোঁজ খবর করার চেষ্টার মধ্যেই বিকট শব্দে সাইরেন বেজে উঠে।
তারপর থেকে একটু পরপরই সাইরেন বাজছে এবং লোকজনের সঙ্গে তারাও দৌড়ে বাংকারে আশ্রয় নিচ্ছেন।
রাশিয়া যে কিয়েভ দখলের চেষ্টা করছে রুমিরাও তা জানতেন। তারা যখন কিয়েভে পৌঁছালেন, তার কাছাকাছি সময়েই রুশ ট্যাংক কিয়েভে ঢুকে পড়ে। আক্রমণও জোরদার করা হয়।
কিন্তু আজভ সাগর তীরবর্তী শহর মারিওপোল থেকে পোল্যান্ড সীমান্তে যেতে হলে কিয়েভ হয়েই যেতে হবে। ফলে আর কোনো ভালো বিকল্প খুঁজে পাননি রুমিরা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রুমি বলেন, “খুব আতঙ্ক লাগছে, একটু পরপর সাইজেন বাজছে। এদিকে বাস, ট্রেন সব বন্ধ। কী করব বুজতেছি না।
“হুড়মুড়িয়ে বাংকারে ঢোকার সময় একজন আরেক জনের গায়ের উপর পড়ছে, আমরা কথা বলার অবস্থা নাই আসলে। আমাদের জন্য দোয়া করেন।”
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেইনের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত যে বাংলাদেশিরা আটকে পড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই রুমির মত শিক্ষার্থী। দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় পোল্যান্ডের ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তাদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের দূরত্ব পাঁচশ’ কিলোমিটারের মত। এখন সেখানে বিমান চলাচল বন্ধ। স্থলপথে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক নয়। ফলে যুদ্ধের মধ্যে তারা কোথাও যেতে পারছেন না।
অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর হাতে পোল্যান্ড পর্যন্ত যাওয়ার জন্য যথেষ্ট টাকাও নেই। বাংলাদেশ থেকে সেখানে টাকা পাঠানো জটিল বলে তাদের সঙ্কট আরও বেশি।