ইউক্রেইনে থাকা বাংলাদেশিরা বিপাকে

ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে সেখানে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।

রাকিব হাসান, স্লোভেনিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2022, 10:08 AM
Updated : 24 Feb 2022, 02:03 PM

নয় বছর ধরে ইউক্রেইনে বসবাসরত গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার মাহবুব পারভেজ কাজ করছেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের ভয় এখানে থাকা অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ইউক্রেইনে বাংলাদেশের স্থায়ী কোনো দূতাবাস নেই। তাই যে কোনো প্রয়োজনে আমাদেরকে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়।

“এ পরিস্থিতিতে সেটা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। বিশেষ করে ইউক্রেইনে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অবৈধ অভিবাসীরা সত্যিকার অর্থেই বিপাকে পড়েছেন।”

এইচএসসি পাশের পর শিক্ষার্থী ভিসায় পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে পাড়ি জমান মাহবুব। কিয়েভ ন্যাশনাল টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন থেকে স্নাতক শেষ করে সেখানেই চাকরি শুরু করেন।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের হিসাবে ইউক্রেইনে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে ৯ বছরের অভিজ্ঞতায় মাহবুব মনে করেন, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে বাংলাদেশির সংখ্যা দূতাবাসের হিসাবের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি।  

“ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর আশায় অনেকে ইউক্রেইনে পা রেখেছিলেন। অবৈধভাবে পোল্যান্ড কিংবা লিথুয়ানিয়াতে প্রবেশের সময় তাদের অনেকে এখানকার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। ইউক্রেনের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে হাজার দুয়েক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে শুনেছি।”

শিক্ষার্থী ভিসায় বৈধভাবে ইউক্রেইনে যাওয়া বাংলাদেশিরাও বিপাকে রয়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকেই ধুঁকছিল ইউক্রেইনের অর্থনীতি। মহামারী এ সংকটকে আরও গভীর করেছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী হিসেবে যারা গিয়েছিলেন, তাদের কাজ করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ সীমিত ছিল।

বাংলাদেশ থেকে ইউক্রেইনে অর্থ পাঠানোও বেশ জটিল।  এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাহবুব বলেন, “শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ফাইল খুলে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি কিংবা হোস্টেলের খরচ পাঠাতে পারেন। তবে এ প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা আনার ব্যবস্থা নেই।

“তাই এ পরিস্থিতিতে যাদের কাজ নেই, বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী কিংবা ইউক্রেইনে যেসব অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসী আটকা পড়েছেন, তাদের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। অনেকে উপায় না দেখে হুন্ডির পেছনে ছোটেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটাও খুব জটিল হয়ে পড়েছে।”

মাহবুব পারভেজ জানান, অপ্রতুল হলেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক সময় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অনিবন্ধিত অভিবাসীদের কিছু সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে ইউক্রেইনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কর্মতৎপরতা ‘চোখে পড়ার মতো নয়’।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাহবুব বলেন, “দূতাবাসের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে আমাদেরকে নিয়ে জুম মিটিং করা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ইউক্রেইনের সঙ্গে থাকা নিজেদের সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোল্যান্ড।

“তাই ইউক্রেইনে আটকে পড়া তৃতীয় কোনো দেশের নাগরিক যদি পোল্যান্ডে যেতে চান, তাহলে ১৫ দিনের ট্রানজিটে তিনি সেদেশে থাকার অনুমতি পাবেন। দূতাবাস আমাদেরকে পোল্যান্ডের ট্রানজিট ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি এ মুহূর্তে নিজ দেশে ফেরত যেতে চান তাহলে তাকে সরাসরি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।”

মাহবুব পারভেজ বলেন, ইউএস ডলার ও ইউরোর বিপরীতে হ্রিভনিয়ার দাম পড়ে যাওয়ায় ইউক্রেইনে মুদ্রাস্ফীতি এখন প্রবল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার ফলে গত সপ্তাহে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শাক-সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। কিয়েভসহ ইউক্রেইনের বিভিন্ন শহরে থমথমে ও ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।

“মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না। ওইসব এলাকায় দোকানপাট খোলা আছে। কিন্তু কোথাও মানুষজনের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়ছে না।”

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেইন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিতে চাওয়ার পর থেকেই কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এরইমধ্যে সোমবার রাশিয়া ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। এরপর সেখানে ‘শান্তি রক্ষা’র অযুহাতে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনে সেনা অভিযানের ঘোষণা দেন। পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হওয়ায় ইউক্রেইনে ৩০ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলনস্কি।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!