খসড়ায় অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে; হতে পারে উভয় দণ্ডও।
Published : 14 May 2024, 12:50 AM
দ্রব্যমূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি চিহ্নিত অপরাধের শাস্তি বাড়িয়ে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
খসড়ায় অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে; হতে পারে উভয় দণ্ডও।
এ জন্য বিদ্যমান ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬’ যুগোপযোগী করে নতুন আইন করা হচ্ছে। নতুন আইন করার অংশ হিসেবে গত ৭ মে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন-২০২৪’ এর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহীদের এ নিয়ে মতামত জানাতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়।
মতামত শেষে খসড়া চূড়ান্ত করে নিয়ম অনুযায়ী এটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন ও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সংসদে পাস হবে।
এর আগে ২০১২ সালে পুরোনো আইন অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
এগুলো হচ্ছে- পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি ও বিট লবণ ছাড়া অন্যান্য খাবার লবণ।
নতন আইনের খসড়ায়- খাদ্যশস্যের মধ্যে ধান, চাউল ও গম, আটা, আলু, বীজ ও চারা, মসুর ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল ও তৈলবীজ, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, চিনি, খাবার লবণ (বিট লবণ ব্যতীত), গুড়, মাছ, মৎস্যজাত খাদ্য, মাংস, দুধ, ডিমের এর নাম রয়েছে।
এছাড়া রয়েছে
>> শিশু ও রোগীর খাবার এবং অনুরূপ দ্রব্যাদি
>> ওষুধ এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে যা গ্রহণ করা হয়
>> চিকিৎসা ও শৈল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি
>> কাগজ, নিউজপ্রিন্ট
>> সার
>> জ্বালানি তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল)
>> গ্যাস (পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাস ও এলপিজি) ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি
>> বিদ্যুৎ (সৌর বিদ্যুৎসহ)
>> লোহা ও ইস্পাত
>> সিমেন্ট
>> অন্যান্য পণ্য, যা সরকার কর্তৃক এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সময়ে সময়ে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষিত।
নতুন আইনে খাদ্য হিসেবে ধান, চাউল, গম ও আটা, আলু, বীজ ও চারা, আলু, বীজ ও চারা, গুড়, মাছ, মৎস্যজাত খাদ্য, গুড়, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম নতুন করে যুক্ত হয়েছে।
তেজপাতা, সয়াবিন তেল ও পাম তেলের পরিবর্তে যোগ হয়েছে ভোজ্যতেল ও তৈল।
খাদ্য বহির্ভূত নিত্যপণ্য হিসাবে জ্বালানি তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল), বিদ্যুৎ (সৌর বিদ্যুৎসহ) যোগ হয়েছে।
খসড়ায় নেই যেসব পণ্য
১৯৫৬ সালের মূল আইনে খাদ্যপণ্য ছাড়াও ২৩টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।
তবে ২০১২ সালের প্রজ্ঞাপনে কেবল খাদপণ্য রেখে অন্য ২৩টি পণ্যের নিত্যপণ্য মর্যাদা স্থগিত রাখা হয়েছিল। প্রজ্ঞাপনে খাদ্যপণ্যের ব্যাখ্যায় যুক্ত করা হয়েছিল পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দরুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি ও বিট লবণ ব্যতীত অন্যান্য খাবার লবণ।
প্রজ্ঞাপন ও পুরোনো আইনের ক্ষমতাবলে খাদ্যপণ্যের মধ্যে কেবল সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পুরোনো আইনে থাকা কটন ও উলেন টেক্সটাইল নতুন খসড়া আইনে নেই।
>> পুরোনো আইনের কাগজ নতুন খসড়ায়ও আছে। কিন্তু কাগজের তৈরি বোর্ড, ফাইবার বোর্ড ও এ ধরনের ফাইবার উপাদন থেকে তৈরি বোর্ড নতুন আইনের প্রস্তাবে রাখা হয়নি।
>> যান্ত্রিক যান, এসব যানবাহনের যন্ত্রাংশ, টায়ার-টিউব নতুন খসড়ায় নেই।
>> বাদ গেছে মশার কয়েল।
>> মাইকা (প্রসাধনী ও সিমেন্ট তৈরির কাজে ব্যবহৃত খনিজ উপাদান)।
>> ইলেক্ট্রিক্যালস, তার, রেডিও এবং এ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ।
>> কাচ ও কাচের পণ্য এবং কাচের তৈরি ল্যাবরেটরি ইক্যুইপমেন্ট।
>> কৃত্রিম সিল্কের কাপড়
>> বাইসাইকেল, সাইকেল যন্ত্রাংশ ও টায়ার টিউব
>> ম্যাচ বা দিয়াশলাই
>> কাঠ
>> সেনিটারি ও পানি সরবরাহ পণ্য
>> সিগারেট
>> পশুর চর্বি
>> টর্চ লাইনের ব্যাটারি
অপরাধ ও দণ্ড
খসড়ায় অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি উভয় দণ্ডও হতে পারে।
বর্তমান আইনে তিন বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানার কথা বলা হলেও পরিমাণ বলা নেই।
খসড়ায় কোম্পানি বা সংস্থা দ্বারা অপরাধ প্রমাণিত হলে কোম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকার প্রমাণ দিতে পারলে তার উপর শাস্তি আরোপ হবে না।
মিথ্যা বিবৃতি বা তথ্য দেওয়ার অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।