করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কেরানীগঞ্জের স্যানিটারি ব্যবসায়ী শওকত আলী প্রায় ৯ লাখ টাকা দেনা মাথায় নিয়ে দেড় মাস আগে মোটরসাইকেল নিয়ে রাইড সেবা দিতে নামেন।
দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের জীবিকার উৎস ছিল এই বাহন। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার সকালে সেটিকেই তিনি পুড়িয়ে দেন।
রাতে গুলশান বিভাগের ডিসি কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সোহেল বলেন, “আর বাইকই চালাব না। সারাদিন মোটরসাইকেল চালাব আর অ্যাপ কোম্পানি ২৫ পারসেন্ট টাকা কেটে নিয়ে যাবে- এটা হয় না।
“আবার অ্যাপ ছাড়া বাইক চালালে পুলিশ মামলা দেবে- এইসব ক্ষোভেই আমি বাইক জ্বালিয়ে দিয়েছি।”
দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসা থেকে নিজের পুরনো টিভিএস ফ্লেম মোটরসাইকেলটি নিয়ে বের হয়ে যাত্রী নিয়ে গুলশানে যান। লিংক রোডের মোড়ে আরেক যাত্রী তোলার জন্য কথা বলছিলেন। সেই সময়ই পুলিশ এসে তার মোটরসাইকেলের কাগজ চায়।
দুই সপ্তাহ আগে মামলা খাওয়ার কথা জানিয়ে আর মামলা না দিতে অনুরোধ করলেও ‘রাইড শেয়ারিং অ্যাপ’ এর পরিবর্তে সরাসরি যাত্রী তোলার অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা করতে উদ্যত হন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। ডিসি গুলশান কথা বলার জন্য তাকে ডেকেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সোমবার সকালে মোটরসাইকেল পোড়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে মন্তব্যে বিভিন্নজন বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে শওকত আলম সোহেল নামের এক ব্যক্তি নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভাসমান সিগারেটবিক্রেতা ইসমাইল আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের মোড়ে কয়েকটি মোটরসাইকেল জটলা পাকিয়ে ছিল। তখন দেবপ্রিয় নামে ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট এসে মোটরসাইকেলগুলোকে ধাওয়া দেয়।
শওকত তখন যাত্রী তোলার অপেক্ষায় ছিলেন। অন্য মোটরসাইকেলগুলো সরে গেলেও তিনি সরে যেতে পারেননি। পুলিশ তার কাগজপত্র নিয়ে যায়।
“শওকত বারবার বলতে থাকেন, স্যার কয়দিন আগে একটা মামলা খাইছি আর মামলা দিয়েন না। অবস্থা একেবারেই খারাপ, হাজার টাকা ফাইন দেওয়ার অবস্থা নাই। পুলিশ সার্জেন্ট কোন কথা না শুনে কাগজ নিয়ে পজ মেশিনে মামলা টাইপ করতে শুরু করেন। এরপরই শওকত ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের মোটরসাইকেলের তেলের লাইন খুলে আগুন জ্বালিয়ে দেন।”
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ গিয়ে অবৈধ পার্কিংয়ের অভিযোগে মামলা দিলে তিনি (শওকত) উত্তেজিত হয়ে এ ঘটনা ঘটান। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে পল্টন এলাকায় রং পার্কিংয়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছিল।