হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিকের মৃত্যুর ঘটনায় সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হাসেমসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে পুলিশ; আটক করা হয়েছে কোম্পানিটির সিইও শাহানশাহ আজাদকে।
Published : 10 Jul 2021, 03:08 PM
হাসেমসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলার খবর শনিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম।
তিনি বলেছেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছে।
এর মধ্যেই বেলা দেড়টার দিকে ঢাকার ফার্মগেইটের ভবন সিজান পয়েন্টে সজীব গ্রুপের অফিস থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও শাহানশাহ আজাদকে একটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়।
কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে সজীব গ্রুপের সিইওকে নিয়ে যেতে দেখেছেন সেখানে উপস্থিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক।
ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. শাহাবুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনারা ডিবির লোক বলে পরিচয় দিয়েছেন। স্যারকে (শাহানশাহ আজাদ) নিয়ে গেছেন।”
আরেক নিরাপত্তা কর্মী নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে একজন আসে এবং কয়টি লিফট-সিঁড়ি আছে জানতে চায়। তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট ছিল এবং লিফটে উঠে স্যারকে ধরে নিয়ে যায়।”
উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ‘এখন নয়’ বলে এড়িয়ে যান তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুপুরে রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় আটজনকে আটক করা হয়েছে।
তবে কাদের আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমও বলেন, আটজনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসেমের (৭০) পাশাপাশি সজীব গ্রুপের সিইও শাহানশাহ আজাদের নাম রয়েছে।
আসামিদের মধ্যে হাসেমের চার ছেলে রয়েছেন, তারা হলেন- হাসীব বিন হাসেম (৩৯), তারেক ইব্রাহীম (৩৫), তাওসীব ইব্রাহীম (৩৩) ও তানজিম ইব্রাহীম (২১)। তারা সবাই কোম্পানির পরিচালক।
এছাড়াও আসামি করা হয়েছে হাসেম ফুডসের উপমহাব্যবস্থাপক মামনুর রশীদ, প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিনকে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস কারখানায় সিজান জুস, নসিলা, ট্যাং, কুলসন ম্যাকারনি, বোর্নভিটার মতো জনপ্রিয় সব খাদ্যপণ্য তৈরি হত।
অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানোর বিষয়টি প্রকাশ পায়। কারখানাটিতে শিশু শ্রমিক ব্যবহারের বিষয়টিও হয় প্রকাশ্য।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, মামলায় দণ্ডবিধির ৩০৪, ৩০৪ (ক), ৩০৭, ধারাগুলো আসতে পারে। এসব ধারায় অবহেলাজনিত হত্যার বিষয়গুলো রয়েছে।
মামলার আগে সকালেই পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, কারখানা সংশ্লিষ্টরা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন।
সজীব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসেম অবশ্য অর্ধশত মৃত্যুর দায় নিতে নারাজ।
তিনি অগ্নিকাণ্ডের পর শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এই কারখানা কম্পাউন্ডে আমরা ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। দুই হাজারের বেশি শ্রমিকের সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। নিয়মকানুন মেনেই আমরা ব্যবসা করছি। কিন্তু শেষ জীবনে এসে বড় পরীক্ষার মুখে ফেলে দিল এই অগ্নিকাণ্ড।”
এক সময় আমদানি করা পণ্য বিপণনের ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও ২০০০ সালে নারায়ণগঞ্জে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা শুরু করে সজীব গ্রুপ। সিজান, সজীব, কুলসন, নসিলাসহ ১১টি ব্র্যান্ড নামে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রয়েছে তাদের।
কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি হলেন আবুল হাসেম। তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অন্য ছেলেরা পরিচালক।
রূপগঞ্জের কম্পাউন্ডে যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে, সেটা নির্মাণ করা হয় চার বছর আগে। পুরো কম্পাউন্ডের সবগুলো ইউনিট মিলিয়ে আগে প্রতি শিফটে ৭০০ শ্রমিক কাজ করেলেও লকডাউনের মধ্যে কর্মী সংখ্যা ‘কম ছিল’ বলে চেয়ারম্যানের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভবনটির যে আয়তন, তাতে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা দরকার ছিল।
“অথচ আমরা পেলাম মাত্র দুটি এক্সিট। এর মধ্যে প্রথম এক্সিট ছিল আগুনের মধ্যে। শুরুতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কেউ যেতে পারেনি।”
ভবনটিতে ফায়ার সেইফটি ইকুইপমেন্ট কী কী দেখেছেন এবং তা পর্যাপ্ত ছিল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখতে পাইনি। সেরকম কোনো বিষয় চোখে পড়েনি।”