শুক্রবার বিকালে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক অপারেশন্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, “ভবনটির আয়তন প্রায় ৩৫ হাজার বর্গফুট। ওই ভবনের জন্য অন্তত চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা দরকার ছিল।
“অথচ বড় এই ভবনে আমরা পেলাম মাত্র দুটি এক্সিট। এর মধ্যে প্রথম এক্সিট ছিল আগুনের মধ্যে। শুরুতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কেউ যেতে পারেনি।“
দ্বিতীয় সিঁড়ির কাছেও তাপ ও ধোঁয়ার কারণে ভেতরে আটকে থাকারা যেতে পারেননি বলে তাদের ধারণার কথা জানান তিনি। যে কারণে সেই পথেও শ্রমিকরা বের হতে পারেননি, যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
ভবনটিতে ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট কী কী দেখেছেন এবং তা পর্যাপ্ত ছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখতে পাইনি। সেরকম কোনো বিষয় চোখে পড়েনি।
“যখন ফাইনালি তদন্ত করব, তখন চেক করব বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড- বিএনবিসি অনুযায়ী ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল কিনা কিংবা আগুন লাগলে ভবনের আয়তন অনুযায়ী এক্সিট ছিল কিনা, যা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মীরা নিরাপদে বের হতে পারেন।“
বেশিরভাগ মৃতদেহ চার তলায় পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পাঁচ তলায় কাউকে সনাক্ত করিনি এবং ছয় তলায় কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই আশা করা হচ্ছে আর হয়ত ভেতরে কোনো মরদেহ নেই।“
শ্রমিকরা কিভাবে মারা গিয়ে থাকতে পারেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “মরদেহ পোড়া অবস্থায় দেখেছি। এটার পোস্টমর্টেম হলে আসল কারণ জানা যাবে। এ রকম আগুনে সাফকেশন হওয়া স্বাভাবিক। আর তাপ সহ্য করাও সম্ভব নয়।“
আগুন অনেক ভাবে ক্ষতি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুধু আগুন ক্ষতি করে তা কিন্তু না। একত্রে বড় আগুন হলে তাপের কারণে ১০ ফুটের মধ্যে কেউ যেতে পারে না। যে কারণে এক্সিট দরজার কাছে কেউ পৌঁছুতে পারেনি।“
“মূল আগুন রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে নেভানো হলেও প্রচুর সরঞ্জামের কারণে ছোট ছোট আগুন নেভানো যায়নি।“
এক থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভসের অপারশেন বিভাগের এই পরিচালক বলেন, ”এখন আমাদের কর্মীরা ছয়তলায় কাজ করছেন। এটি পুরোটাই গোডাউন। এখনও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু। পুরো ফ্লোরজুড়ে কাঁচামাল থাকায় অল্প অল্প করে আগুন ও ধোঁয়া উড়ছে।“
প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল ও জিনিসপত্র নেট দিয়ে আলাদা ‘সেকশন’ করে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি সন্ধ্যার মধ্যে মেইন সার্চ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের এই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।
শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৪৮ জনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আগের রাতে মারা যাওয়া তিনজনসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জন হয়েছে।
ছয় তলা ভবনের এই কারখানায় জুস, বেভারেজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হত।
আরও পড়ুন