মহামারীর কারণে কাজের অগ্রগতি যতটা এগোনোর কথা ছিল তা না হওয়ায় ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করা নিয়ে সংশয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
Published : 22 May 2021, 10:58 AM
প্রকল্পের এই অংশের প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্বে ডিসেম্বরের মধ্যে রেল চালু করতে তোড়জোড় থাকলেও এখন বাধা করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ।
এই কারণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এখন সময়সীমা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না।
ঢাকার যানজট নিরসনে হাতে নেওয়া আলোচিত এই প্রকল্পের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি-৬ এর কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ।
মেট্রোরেল প্রকল্প-৬ এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেল উদ্বোধন করার কথা ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, এমআরটি-৬ শেষ করার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।
“কিন্তু চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এখন সেই সময়সীমার ব্যত্যয় ঘটেছে।“
তবে প্রথমে যে সময়সীমা (২০২৪ সালের জুন) নেওয়া হয়েছিল, তার আগেই এমআরটি-৬ এর নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
সময়মত কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে বেশ জটিলতায় ফেলেছে মহামারী। অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি প্রকল্পের অনেক কর্মীও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রকল্পের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, মেট্রোরেলে কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি জনবলের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৬১ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কেউ মারা যাননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরার ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ নয় মাস আগে শেষ হওয়ায় সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ডিপোর পূর্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।
প্রকল্পের ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ‘ভায়াডাক্টের’ মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন সম্পন্ন হয়েছে।
ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের কাজ যেমন হয়েছে, তেমনি উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ওপর বসানো হয়েছে রেললাইন।
এদিকে উত্তরা থেকে ৩ ও ৪ নম্বর প্যাকেজের মাধ্যমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উভয় প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের অগাস্টে শুরু হয়ে গত এপ্রিল পর্যন্ত সব পাইলক্যাপ, আই গার্ডার, প্রি-কাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং পিয়ার হেড, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, পাঁচটি ব্যালান্স কেন্টিলিভার নির্মাণ এবং ১৪ হাজার ৭৪৮টি প্যারাপ্যাট ওয়াল ভায়াডাক্টের ওপর স্থাপন করা হয়েছে।
উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের কনকোর্স ছাদ এবং প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কাজ শেষ।
বাকি পাঁচ স্টেশন মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়া পাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের কনকোর্স ছাদ ও প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনগুলোর স্টিলের ছাদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা সেন্টার স্টেশনের স্টিলের ছাদ নির্মাণ কাজ চলছে। সব মিলে এই নয় স্টেশনের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এদিকে উত্তরার ডিপোতে যখন প্রথম সেটের ট্রেনগুলো চালানোর উপযোগী করা হচ্ছে, তখন দ্বিতীয় সেটের চালান এসে পৌঁছেছে মোংলা বন্দরে।
ডিপোতে এখন প্রথম সেটের ‘ফাংশনাল’ কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। এরপর ভায়াডাক্টের ওপরে মেইন লাইনে পরীক্ষা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সমন্বিত টেস্টের পর ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে।
প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, দ্বিতীয় সেটের ছয়টি রেলকোচ শিগগির ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এভাবে জাপান থেকে মোট ২৪ সেট কোচ আসবে।
প্যকেজ ৬ এর আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্টে চারটি স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।
আবার ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায় ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম এর অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে অনেকগুলো পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
গাবতলী ও উত্তরায় কনস্ট্রাশন ইয়ার্ডে ফিল্ড হাসপাতাল চালুর পাশাপাশি কর্মীদের টিকাও দেওয়া হচ্ছে।