রাঙ্গুনিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণংকর থেরোর পক্ষে পাঠানো উকিল নোটিস সংবাদ মাধ্যম, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি হুমকি উল্লেখ করে তার আইনজীবীকে পাল্টা উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে।
Published : 12 Nov 2020, 01:21 PM
ফৌজদারী মামলার আসামি শরণংকর থেরোকে ‘সাম্প্রদায়িক, ভূমিদস্যু, দুর্বৃত্ত’ অ্যাখ্যা দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া ও রাঙ্গুনিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা শৈবাল চক্রবর্তীর পক্ষে নোটিসটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু।
বুধবার রেজিস্ট্রার ডাকে ভিক্ষু শরণংকর থেরোর আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের কাছে এ নোটিস পাঠিয়ে বলা হয়েছে, শরণংকর থেরোর অনৈতিক-বেআইনি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সহযোগিতা না করার জন্য।
যদি তা না করেন তাহলে শরণংকর থেরো ও তার (আইনজীবী) বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোটিসে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘শরণংকর থেরোর পক্ষে দাঁড়িয়ে আপনি তার বেআইনি, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকণ্ডকে সমর্থন দিয়েছেন। আপনার এই অবস্থান সংবাদ মাধ্যম, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জন্য হুমকি তৈরি করেছে।”
এই আইনজীবীকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয় মনে করিয়ে দিয়ে নোটিসে আরও বলা হয়েছে, “বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাদের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করায় আপনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। এটি খুব সাধারণ বিষয় যে, কেউ কোনো বক্তব্য দিলে গণমাধ্যম তা প্রচার-প্রকাশ করবে। এটা তাদের নিয়মিত দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু উকিল নোটিস দিয়ে আপনি তাদের নিয়মিত কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন, যা অনৈতিক ও বেআইনি।”
একজন আইনজীবী হিসেবে রবীন্দ্র ঘোষের দায়বদ্ধতা কী, সেটিও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে আব্দুল মতিন খসরুর উকিল নোটিসে।
“বার কউন্সিলের নিবন্ধিত একজন সদস্য হিসেবে আপনি একাজ করতে পারেন না। আপনার বেআইনি কর্মকাণ্ড দিয়ে আপনি রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দাদের স্বাধীন চলাফেরা, সংগঠনের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সম্পদের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করেছেন। তাছাড়া আপনার মক্কেল (ভিক্ষু শরণংকর থেরো) একজন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধী। ফলে একজন অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করায় আপনাকেও তার দায় নিতে হবে সমানভাবে। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী আমার মক্কেল আপনার বিরুদ্ধে মামলা করার সম্পূর্ণ অধিকার রাখে,” বলা হয়েছে এতে।
নোটিসে ভিক্ষু শরণংকর থেরোর কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “তিনি একজন দুর্বৃত্ত। তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৬টি ফৌজদারী মামলা রয়েছে। মানুষ হিসেবে সে একজন সাম্প্রদায়িক এবং আইনের চোখে পলাতক একজন ব্যক্তি। তার বেআইনি কর্মকাণ্ড রাঙ্গুনিয়ায় অশান্তি-অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। অসংখ্য হিন্দু-মুসলিমদের জমি দখল ছাড়াও সে বেআইনিভাবে ১০০ একরের মত সংরক্ষিত বনভূমি দখল করেছে।
“শুধু তাই না, ফেসবুকসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে ভিক্ষু শরণংকর থেরো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সচেতনভাবে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করেছেন। তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৪ থেকে ৫টি মামলা হয়েছে।”
রবীন্দ্র ঘোষকে উদ্দেশ্য করে আরও বলা হয়েছে, “একজন আইনজীবী হিসেবে আপনার উচিত আইন ও বিচারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা। কিন্তু আপনার কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ভূমিদস্যু ও দুর্বৃত্তায়নের পক্ষে। রঙ্গুনিয়ার স্থানীয় অধিবাসীদের মৌলিক অধিকার উপেক্ষা করে আপনি আপনার মক্কেলের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। রাঙ্গুনিয়ার পরিস্থিতি না জেনেই আপনি আপনার মক্কেলের পক্ষে বেআইনি উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন।
“উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপনার প্রতি অনুরোধ হচ্ছে ভূমিদস্যু, দুর্বৃত্ত ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত মর্যাদা পক্ষাবলম্বন না করা। তাকে সহযোগিতা না করা। যদি তা না করেন তাহলে ত্যথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী শরণংকর থেরো ও আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বৌদ্ধ বিহার স্থাপনের নামে ভিক্ষু শরণংকর কর্তৃক অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনভূমি, মন্দির ও শশ্মান দখল এবং পাহাড় ও গাছপালা কাটার সমালোচনা করে গতমাসে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শীর্ষ সংগঠনগুলোর নেতারা বিবৃতি দিলে তা বিভিন্ন গণমাধ্যম তা প্রকাশ করে।
এই বিবৃতি কেন প্রকাশ করা হয়েছে, সেজন্য শরণংকর থেরো বিভিন্ন গণমাধ্যমে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষে শরণংকর থেরোর আইনজীবীকে নোটিস পাঠানো হল।