“দেশের নাগরিক ও সরকারের তথ্য উপাত্ত নিরাপদে দেশের মাটিতে সংরক্ষণ করতে পারব; যা তথ্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য খুবই প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
Published : 06 May 2024, 10:54 PM
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকলের সহায়তায় দেশের সরকারি ক্লাউড সেবা ‘বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ক্লাউড’ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করল।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এইঅনুষ্ঠানআয়োজন করা হয়।
সেখানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “ওরাকল ক্লাউডের সকল সেবা, সুযোগ ও নিরাপত্তার যে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, সেগুলোর সবগুলোই আমাদের দেশের মাটিতে এবং আমাদের নিজস্ব ডেটা সেন্টারে আমরা স্থাপন করেছিলাম। সেটিই আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হল। ‘বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ক্লাউড’ নামে এটি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আজ চালু করলাম।
“ওরাকলের টেকনোলজি, সিকিউরিটি এবং তাদের সাপোর্টগুলো আমরা নিচ্ছি, যেখানে সরকারের ১৪টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার ডেটা ও সেবাগুলো আমরা এখানে সংরক্ষণ করছি এবং এখান থেকে ডেলিভারি দিচ্ছি। আমাদের যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, আগামীতে আমাদের ডিজিটাল নথি থেকে শুরু করে আমাদের যে অন্যান্য সেবাগুলো দেওয়ার জন্য যেসব সুবিধা দরকার, আমাদের সিস্টেম থেকেই তারা (ওরাকল) সেগুলোকে হোস্ট করবে।”
বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ক্লাউড সেবা চালুর মাধ্যমে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের সেবাগুলো, তথ্য উপাত্তগুলো সংরক্ষণের সক্ষমতা আমাদের হয়েছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আমরা সাশ্রয় করতে পারব, দেশের নাগরিক ও সরকারের তথ্য উপাত্ত নিরাপদে দেশের মাটিতে সংরক্ষণ করতে পারব; যা তথ্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য খুবই প্রয়োজন।”
পলক বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অনেক আগে ধারণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে ডেটার পরিমাণ অনেক বাড়বে, সেবাগুলোও অনেক বাড়বে। সেই ডেটাটা সংরক্ষণ করা এবং এর নিরাপত্তার বিষয়টাও অনেক জরুরি হয়ে পড়বে। সেই বিবেচনা থেকে আমরা বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার লিমিটেড নামে একটা কোম্পানি তৈরি করি। এই কোম্পানিটা হয়েছে, যাতে আমাদের আয় থেকে ব্যয়টা মেটাতে পারি এবং যে বিনিয়োগটা হয়েছে সেটা যেন আমরা সরকারকে ফেরতে দিতে পারি।
“আমরা দেখলাম সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ওরাকল ক্লাউডের এই সার্ভিসটাই নিচ্ছে। যেখানে হয়তো সিঙ্গাপুর বা দেশের বাইরে কোথাও তাদের তথ্যগুলো রেখে সেখান থেকেই সেবাগুলো ডেলিভারি করা হচ্ছে। তখন আমরা ওরাকলের সঙ্গে বেশ কয়েকটা বৈঠক করি। ওরাকল ক্লাউডটা যদি অন প্রেমিসেস এবং ‘ডেডিকেটেড রিজিয়নটা’ যদি বাংলাদেশ থেকে হোস্ট করতে চাই, তাহলে সেটা কীভাবে সম্ভব। গত তিন বছরে সেটা নিয়ে অনেক জায়গায় আলোচনা শেষে আজকের এই জায়গায় আসা গেছে।”
পলক বলেন, “আমাদের ডেটা সেন্টারে এখন ৫০টি র্যাক, সেখানে ৬০ জন ছেলে-মেয়ে কাজ করছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি ওরাকলের একটা টিমও আমাদের সহায়তা করছে এটা সেটআপ করা এবং অপারেশনে যাওয়ার জন্য।
“পরের ধাপে আমরা চেষ্টা করবো আরও যে ৫৬টি মন্ত্রণালয় আছে- যারা ভিন্ন ভিন্ন ডেটা সেন্টার করার পরিকল্পনা করছে, দেশের বাইরে যাদের ডেটা রাখতে হচ্ছে- তাদের সকল ডেটা ও সিস্টেমগুলো আমাদের এই ক্লাউডে অত্যন্ত নিরাপদে রাখতে পারব।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, “ওরাকলের সাথে বাংলাদেশের সরকারি সার্বভৌম ক্লাউড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) একটি কার্যকর ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ক্লাউডের ব্যবহার সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে, যা দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে সহায়ক হবে।”
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বিরাজমান থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তাদের উচ্চ-মানের প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা পালন করে যাবে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নীতি ও আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় থাকবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।”
ওরাকলের জাপান ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্যারেট ইলগ বলেন, “কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, পরিমাপযোগ্যতা ও ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে সরকারগুলোর কাছে ক্লাউড-ফার্স্ট নীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ডেটা সেন্টারের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ ক্লাউড সলিউশন দিচ্ছে ওসিআই ডেডিকেটেড রিজিয়ন।”
বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানির চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন বলেন, “ক্লাউডভিত্তিক রূপান্তরের যাত্রাকে নিরাপদে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সরকারি সংস্থাগুলোকে সহায়তা করবে ওরাকলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত বাংলাদেশের সরকারি সার্বভৌম ক্লাউড।”
ওরাকল বাংলাদেশের এমডি রুবাবা দৌলা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।