করোনাভাইরাসের মহামারীর এই দিনে যে বাড়িওয়ালারা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিচ্ছেন, তাদের হুঁশিয়ার করল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
Published : 16 Apr 2020, 07:47 PM
কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, কোনো বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটে কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করলে ওই বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস কী, তা খুঁজে দেখা হবে।
কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে নোটিস পেয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ আসার পর বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “জাতির এই সঙ্কটময় সময়ে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে জাতির সেবায় নিয়োজিত। এদের সাথে খারাপ আচরণ কিংবা কোনো প্রকার অসম্মান করা আইনগতভাবেই অপরাধ।”
ওইসব বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি কেউ যদি এই আইনের লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
“এরপরও যদি কোনো বাড়ির মালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলেন বা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। তাহলে দুদক আইন অনুযায়ী এসব বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস খুঁজে দেখবে। অবৈধ সম্পদের উৎস পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।”
‘ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি করলে কঠিন পরিণতি’
মহামারীর মধ্যে সরকারের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেন ইকবাল মাহমুদ।
তিনি বলেন, “অতীতেও আমরা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, ত্রাণ কাজে দুর্নীতি করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। আজও বলছি, ত্রাণ কাজে অন্যায় করলে মামলা বা গ্রেপ্তারের মত আইনি কার্যক্রম চলবে এবং দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দাখিল করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত কল্পে বিচারিক কর্মপ্রয়াসে দুদক সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকবে। এ জাতীয় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকল্পে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দুদক।”
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবীদের জন্য খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। সেই ত্রাণ কার্যক্রমে অনিয়মের খবর আসছে সারা দেশ থেকেই।
হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরের চাল কালোবাজারে বিক্রি এবং কয়েকটি জায়গায় আত্মসাৎ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছেন অনেকে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ত্রাণ বা অন্য কোনো সহায়তা নিয়ে কেউ নয়-ছয় করবেন না। তারপরও কিছু ব্যক্তি তাদের লোভ সংবরণ করতে পারলেন না।”
ত্রাণ দুর্নীতি ও অনিয়মন নিয়ে কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়ে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “দেখা যায় দেশের কয়েকটি জায়গায় ত্রাণের চাল যথাস্থানে রাখা হয়নি, তালিকা প্রস্তুতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বা ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কমিশন এ পর্যন্ত চারটি জায়গায় এ জাতীয় ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।”
ঢাকা, মানিকগঞ্জ এবং বগুড়ার চারটি ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “এসব মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে দ্রুত চার্জশিট দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে দুদক এ জাতীয় অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”