ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ভোট পড়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, এর কারণ জানতে গবেষণা করতে হবে।
Published : 02 Feb 2020, 04:24 PM
ভোটের পরের দিন রোববার নির্বাচন ভবনে ভোটের ফল নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
ইসি সচিব বলেন, “ভোটের কাস্টিংয়ের হার উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও দক্ষিণে ২৯ দশমিক ০০২ শতাংশ। গড়ে দুই সিটিতে ভোট পড়েছে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।”
তবে ভোট পড়ার এই হারে অসন্তুষ্ট না হলেও তারা ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট’ নন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনের কমিশনের এই মুখপাত্র জানান।
তিনি বলেন, “আমরা অসন্তুষ্ট না। প্রচার ছিল প্রচুর। আমাদের ধারণা ছিল, শতকরা ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে। কিন্তু তার চেয়ে কম পড়েছে। ভোট কাস্টিংয়ের দিক থেকে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না।
“যেহেতু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতরকম কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত তা নির্বাচন কমিশন নিয়েছিল। কেন কম ভোট পড়ল তা গবেষণার বিষয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সুপারিশ থেকেও ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ জানা যেতে পারে।”
ভোটারদের অনাগ্রহের পেছনে অনাস্থা রয়েছে কি না জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, “অনাস্থার কারণে যদি ভোটে না যেত, তাহলে যারা সরকারি দলের, তাদের তো অন্তত ভোটে অনাস্থা থাকার কথা না।
“তাদের সব ভোটার যদি ভোট দিত, তাহলেও তো এত কম ভোট পড়ত না। তার মানে, তাদেরও অনেক ভোটার ভোট দিতে যান নাই। আমি ভোট না দিতে গেলেও সমস্যা নাই, এ ধরনের একটা মনোভাব থেকে হয়তো অনেকেই ভোট দিতে যান নাই।”
তিনি বলেন, তাছাড়া জনগণ ছুটি পেয়েছে, অনেকে ছুটি ভোগ করেছে। ছুটি পেলেই মানুষ বাইরে চলে যায়। কেউ কেউ ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
“উন্নত দেশগুলোতে ভোটের হার অনেক কম। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট মানুষ দিতে আসে না। অস্ট্রেলিয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশন কী ব্যর্থ? মোটেই না। এ জন্য সেখানে আইন করা হয়েছে যে, ভোট না দিতে আসলে ১০০ ডলার জরিমানা দিতে হবে। তারা ১০০ ডলার জরিমানা দেয়, তারপরও ভোট দিতে যায় না।”
নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে ইসি সচিব বলেন, “নির্বাচনে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল। পরিবেশ ভালো ছিল। কোথাও কোনো তেমন গণ্ডগোল হয়নি। কাউকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাত করেনি। সবকিছুই সঠিক ছিল।”
তখন ‘গোপন কক্ষে ভোটার ছাড়া অন্যদের উপস্থিতি বা অন্যজনের ভোট দিয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ তুললে তিনি বলেন, “অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে খুবই অল্প মাত্রায়, আপনাদের মিডিয়ার মাধ্যমে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি।”
বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “এটিও আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি। এবিষয়ে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি।”
এসব অভিযোগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনে লিখিতভাবে এলে তবেই তদন্ত করা হবে বলে ইসি সচিব জানান।
দুপুরে ইটিআই ভবনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।
কিন্তু প্রকাশে বিলম্বের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে ইসি সচিব বলেন, “ইভিএমে রেজাল্ট দ্রুতই পাওয়া গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর করে ঘোষণা করতে দেরি হয়েছে। কোন কারিগরি জটিলতা ছিল না। ট্যাবে ফলাফল সংগ্রহ এবং প্রকাশ আইনে নাই। এটা পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি।”
প্রার্থীদের লাগানো প্রচারণার পোস্টার আগামীকালের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নিয়ে সরাতে হয়, তাহলে প্রার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
ভোটারের জন্য দিনভর হা-পিত্যেশের মধ্যেও রাজধানীজুড়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের দুই মেয়র প্রার্থীই বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণে ২৪ লাখ ও উত্তরে ৩০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য প্রায় আড়াই হাজার ভোট কেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রের বাইরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের সরব উপস্থিতি থাকলেও ভোটারের জন্য ছিল হাহাকার।
পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটিতে একদিনেই ভোট হয়েছিল। তাতে ব্যালট পেপারে গড়ে ভোট পড়েছিল ৪৩%।
সেবার ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৩৭ শতাংশ; দক্ষিণ সিটিতে ৪৮ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদের উপ নির্বাচনে ৩১ শতাংশ ভোট পড়ে।
কে এম নূরুল হুদা কমিশন যোগ দেওয়ার দুই বছরের মাথায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪০ শতাংশ, তা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, সিটি ভোটে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের এজেন্ট ও সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও বলেছেন, তিনি ভোটকেন্দ্র ঘুরে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাননি।
তবে বাধার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি হার অনুমান করতে পেরে ভোট কেন্দ্রে যায়নি।