দেনা-পাওনা নিয়ে গ্রামীণফোন-রবি ও বিটিআরসির মধ্যেকার বিরোধ অবসানে ভূমিকা নিয়েও সফল না হওয়ার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটর দুটিকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
Published : 30 Oct 2019, 07:49 PM
তিনি বলেছেন, সরকার উদ্যোগ নিলেও গ্রামীণফোন ও রবি সহযোগিতা না করায় সঙ্কটের সুরাহা করা যায়নি। ফলে এখন আদালতের মাধ্যমেই এর নিষ্পত্তি হবে।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ নিয়ে বহু দিন ধরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির সঙ্গে দেশের বড় দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির টানাপড়েন চলছে।
গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি। তবে গ্রামীণফোন ও রবি ওই নিরীক্ষা প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।
দুই পক্ষের অনমনীয়তার মধ্যে গত মাসে বিটিআরসি এবং গ্রামীণফোন-রবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা বৈঠকের পর সমঝোতার আশা দেখিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
জিপি-রবির সঙ্গে সমঝোতার আভাস অর্থমন্ত্রীর আরও বেশি পেতে জিপি-রবির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক: অর্থমন্ত্রী |
কিন্তু তারপরও সঙ্কটের সুরাহা না হওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর কথা সম্প্রতি জানায় বিটিআরসি।
অন্যদিকে তার আগে বিটিআরসির কাছ থেকে লাইসেন্স বাতিলের নোটিস পেয়ে আদালতে গিয়েছিল মোবাইল অপারেটররা। তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “গ্রামীণফোন ও রবির সাথে টেলিকমমন্ত্রী ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সাথে কয়েক দফা বসা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তোমাদের হিসাবে তো কিছু টাকা পাই, সে কিছু পেমেন্ট করো। সেই টাকা না দেওয়াতে আলোচনা এগিয়ে যায়নি।
তিনি বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় আমরা ভাবলাম, সময় তাদের দিয়েছিলাম এবং তারা চুক্তিও করল আমাদের সাথে যে তারা কমপ্লায়েন্সে নেবে কি না, তারা কমপ্লায়েন্স নিতে পারেনি, তাদের আবার বোর্ড মিটিং করতে হবে, সেজন্য হয়নি।
“আন্তরিকভাবে এগিয়ে গিয়েছিলাম, সে ধরনের সহযোগিতা পাইনি। অনেক দিন অপেক্ষা করা হয়েছে, টাকা দেবে টাকা দেবে, টাকা তারা দেয়নি। যদি টাকা কিছু দিত, তাহলে বুঝতাম আন্তরিকতা আছে।”
এদিকে গ্রামীণফোনের আপিল গ্রহণ করে এই মোবাইল অপারেটরের কাছ থেকে বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট। রবির আবেদনেও হাই কোর্টের আদেশ আসছে সামনে।
বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে বলে এনিয়ে আর কিছু বলতে নারাজ অর্থমন্ত্রী বলেন, “কোর্ট থেকে যেটা হবে, সেটা তাদেরও মানতে হবে, আমাদেরও মানতে হবে।”
তিনি বলেন, “দুই পক্ষের মাঝে মীমাংসা করতে হলে হয় কোর্ট, নয় আর্বিট্রেশন, এটি আর্বিট্রেশনের অংশ। এখানে ১০-২০ টাকা নয়, অনেক টাকা।
“আমাদের ক্লেইম একটা অ্যামাউন্ট, তাদের হিসাবে আরেকটি অ্যামাউন্ট, ডিফারেন্স কিন্তু হিউজ। ছোট ছোট অ্যামাউন্ট হলে নিজেরাই বসে সুরাহা করতে পারতাম। তারাও চায় কোর্টের মাধ্যমে হয়ে গেলে সুরাহা হয়। আমরাও মনে করি, কোর্টের মাধ্যমে হয়ে গেলে ভালো যদি হয় সবার জন্য ভালো হবে।”
তবে এই ধরনের বিরোধ সালিশে সমাধানের পক্ষপাতি মুস্তফা কামাল।
এদিকে গ্রামীণফোন ও রবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারাও আলোচনার মধ্য দিয়ে এই বিরোধের সমাধান চাচ্ছিল; কিন্তু লাইসেন্স বাতিলের নোটিস দেওয়া, প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মতো পদক্ষেপ নিয়ে তাদের আদালতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।