নীতিমালা হওয়ার আগে থেকেও ঢাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও নিবন্ধন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছিল না সংস্থাটি।
এই প্রেক্ষাপটে গত ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠিতে সবগুলো শর্ত পূরণে ‘প্রয়োজনীয় সময়’ দিয়ে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট এবং রাইড শেয়ারিং মোটরযানের তালিকাভুক্তির সনদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বিআরটিএ।
চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বসার চিন্তা করছেন তিনি।
গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’ জারি করে সরকার, যা কার্যকর হওয়ার কথা গত বছরের ৮ মার্চ থেকে। নীতিমালায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের জন্য তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এখনও তা হয়নি।
বিআরটিএ থেকে জানা গেছে, নীতিমালা হওয়ার পর তালিকাভুক্তির সনদের জন্য গত বছরের ২২ এপ্রিল প্রথম আবেদন করে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পাঠাও। পরে সহজ লিমিটেড, চালডাল, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেড, গোল্ডেন রেন লিমিটেড, ওভাই সলিউশনস লিমিটেড, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড, রাইডার রাইডশেয়ার এন্টারপ্রাইজ ইনক লিমিটেড, পিকমি লিমিটেড, ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং প্রবাহন প্রাইভেট লিমিটেড নামে ১৪টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করে।
তালিকাভুক্তির সনদ না দেওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় সেগুলোর মধ্যে ছয়টি পূরণ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব শর্তপূরণের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিআরটিএ ছাড়াও পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কার্যক্রমের বিষয় রয়েছে।
রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনে একটি এসওএস সুবিধা রাখা যার বাটন ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে চালক ও যাত্রীর জিপিএস অবস্থান সরাসরি ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুলিশের সহায়তায় এই কাজটি করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা করা যায়নি।
নীতিমালা অনুযায়ী রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান চালকের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিআরটিএ থেকে তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পরই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্যের জন্য আবেদন করার জন্য বিবেচিত হবে।
রাইড শেয়ারিংয়ের অ্যাপে এমন একটি ব্যবস্থা বা বৈশিষ্ট্য রাখার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে চালক ও যাত্রীর সুরক্ষার জন্য জরুরি বার্তা বা সঙ্কেত সরাসরি পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে চলে যাবে। এটির কাজও শেষ হয়নি। এজন্য পুলিশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, তবে তা শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে তা নিশ্চিত নয়।
বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব শর্ত এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এমন অঙ্গীকারনামা নিয়ে সাময়িকভাবে তালিকাভুক্তির সনদ দেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ আছে যেগুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ।
“এর সঙ্গে পুলিশ, নির্বাচন কমিশন ইনভলভড, তাদের অবকাঠামোর বিষয় আছে। এখন কিছু কিছু জিনিস বাদ দিয়ে দেখা যাক, আমরা তাদের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দিতে পারি কি না, সেটা চিন্তা করছি।”
তালিকাভুক্তির সনদ দিতে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিআরটিএকে আমরা বলেছি, ওদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনা করেন। যদি কোনো অ্যামেন্ডমেন্ট আনতে হয়, এটার প্রস্তাব আমাদের পাঠান। সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।”