‘লাগামহীন’ রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে ছাড় দিয়ে নিবন্ধনের চিন্তা

নীতিমালা হওয়ার এক বছরেও শর্ত পূরণে ব্যর্থ রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন ছাড় দিয়ে নিবন্ধন দিতে চাইছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2019, 04:33 PM
Updated : 5 March 2019, 12:09 PM

নীতিমালা হওয়ার আগে থেকেও ঢাকায় ব্যবসা চালিয়ে আসা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও নিবন্ধন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছিল না সংস্থাটি।

এই প্রেক্ষাপটে গত ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠিতে সবগুলো শর্ত পূরণে ‘প্রয়োজনীয় সময়’ দিয়ে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট এবং রাইড শেয়ারিং মোটরযানের তালিকাভুক্তির সনদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বিআরটিএ।

চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, আগামী সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বসার চিন্তা করছেন তিনি।

গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা-২০১৭’ জারি করে সরকার, যা কার্যকর হওয়ার কথা গত বছরের ৮ মার্চ থেকে। নীতিমালায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের জন্য তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানেরই এখনও তা হয়নি।

বিআরটিএ থেকে জানা গেছে, নীতিমালা হওয়ার পর তালিকাভুক্তির সনদের জন্য গত বছরের ২২ এপ্রিল প্রথম আবেদন করে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পাঠাও। পরে সহজ লিমিটেড, চালডাল, আকাশ টেকনোলজি লিমিটেড, গোল্ডেন রেন লিমিটেড, ওভাই সলিউশনস লিমিটেড, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড, রাইডার রাইডশেয়ার এন্টারপ্রাইজ ইনক লিমিটেড, পিকমি লিমিটেড, ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেড, আকিজ অনলাইন লিমিটেড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং প্রবাহন প্রাইভেট লিমিটেড নামে ১৪টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করে।

বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর ১০টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিদর্শন করে বিআরটিএ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে রাইড শেয়ারিং নীতিমালার কিছু ধারা পূরণ না করায় ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে এসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তির সনদ ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তালিকাভুক্তির সনদ না দেওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় সেগুলোর মধ্যে ছয়টি পূরণ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব শর্তপূরণের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিআরটিএ ছাড়াও পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কার্যক্রমের বিষয় রয়েছে।

রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশনে একটি এসওএস সুবিধা রাখা যার বাটন ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে চালক ও যাত্রীর জিপিএস অবস্থান সরাসরি ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুলিশের সহায়তায় এই কাজটি করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা করা যায়নি। 

বিআরটিএর ওয়েবসাইট এবং রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের অ্যাপে অভিযোগ দায়ের ও গতিবিধি অনুসরণের সুবিধাসহ সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়। এটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ওয়েবপোর্টাল বিআরটিএকে তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখন চলমান।

নীতিমালা অনুযায়ী রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান চালকের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিআরটিএ থেকে তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পরই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্যের জন্য আবেদন করার জন্য বিবেচিত হবে।

রাইড শেয়ারিংয়ের অ্যাপে এমন একটি ব্যবস্থা বা বৈশিষ্ট্য রাখার কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে চালক ও যাত্রীর সুরক্ষার জন্য জরুরি বার্তা বা সঙ্কেত সরাসরি পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে চলে যাবে। এটির কাজও শেষ হয়নি। এজন্য পুলিশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, তবে তা শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে তা নিশ্চিত নয়।

বিআরটিএর ওয়েবসাইটে নীতিমালার আওতায় অনলাইনে কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ওয়েবপোর্টাল স্থাপন ও এ সম্পর্কিত তথ্য বিআরটিএর ডেটাবেইজে সংরক্ষণসহ যাবতীয় কারিগরি সহায়তা রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা করে দেবে।

বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব শর্ত এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এমন অঙ্গীকারনামা নিয়ে সাময়িকভাবে তালিকাভুক্তির সনদ দেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কাজ আছে যেগুলো বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ।

“এর সঙ্গে পুলিশ, নির্বাচন কমিশন ইনভলভড, তাদের অবকাঠামোর বিষয় আছে। এখন কিছু কিছু জিনিস বাদ দিয়ে দেখা যাক, আমরা তাদের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দিতে পারি কি না, সেটা চিন্তা করছি।”

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আমাদের কাজ নয়, বিআরটিএর কাজ। গত বছর নীতিমালাটা করা হয়েছে এখন পর্যন্ত তারা এটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এজন্য আমরা তাদের বলেছি যে, কোনো অসঙ্গতি যদি থেকে থাকে, কোনো ডিসস্যাটিফেকশন থেকে থাকে সেটা আমরা বিবেচনায় আনতে চাই। আগামী ২১ অথবা ২৩ তারিখে এটা নিয়ে একটা বৈঠক করব, সেখানে সব পক্ষকে আমরা ডেকে পাঠাব।”

তালিকাভুক্তির সনদ দিতে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,  “বিআরটিএকে আমরা বলেছি, ওদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনা করেন। যদি কোনো অ্যামেন্ডমেন্ট আনতে হয়, এটার প্রস্তাব আমাদের পাঠান। সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।”