ওজনে হালকা ওই হেলমেট দুর্ঘটনায় কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম, সে প্রশ্ন তুলেছেন একজন বিশেষজ্ঞ।
আর এসব হেলমেটকে ‘খেলনা’ আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাঠাও, উবার, ওভাই ও সহজ রাইডসের চালকদের মাথায় হেলমেট দেখা যায়। তবে রাজধানীতে মোটরবাইক আরোহীদের মধ্যে পাঠাওয়ের হেলমেটই বেশি দেখা যায়।
নিয়মিত মোটরসাইকেল রাইড সেবা নেওয়া মহাখালীর আরজতপাড়ার বাসিন্দা কাজী আশিকুর রহমানের মতে হেলমেটগুলো ‘কোনো কাজের না’।
“অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পাঠাও বা উবারের ড্রাইভাররা নামমাত্র একটি হেলমেট দেয়। এটা মাথা থেকে খুলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে, ফলে সেটা ধরে বসে থাকতে হয়। এই হেলমেট কীভাবে সুরক্ষা দেবে বুঝি না।”
মিরপুরের বাসিন্দা আজিজুর রহমানের মতে, রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা হেলমেটগুলো ‘খুবই নিম্নমানের’।
“এরা যে হেলমেট দেয় তা খুবই পাতলা আর লো কোয়ালিটির। দুর্ঘটনার সময় এগুলো তেমন কোনো কাজেই আসবে না। এছাড়া বেশিরভাগই অপরিষ্কার, ময়লা, দুর্গন্ধময়। একই হেলমেট অনেক লোক ব্যবহার করে বলে চর্ম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে আমি পারতপক্ষে এসব হেলমেট মাথায় পরি না।”
তবে রাইড শেয়ারিং সেবা প্রতিষ্ঠান ওভাইয়ের হেলমেটগুলোর মান ভালো বলে মনে করেন তাদের চালক আশফাকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “এগুলো কেমন তা বলার সুযোগ নাই। কারণ এটা নিয়ে এখনও তো দুর্ঘটনায় পড়িনি। তবে একেবারে খারাপ না। পাঠাওয়ের হেলমেটগুলো একেবারে পাতলা।”
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের বাইকার শামসুল আলম বলেন, এই কোম্পানির চালকের হেলমেটটা ভালো।
“কিন্তু যাত্রীর জন্য যেটা দিছে, সেটা খুব একটা ভালো না। পাতলা।”
“মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়লে মাথা আগে গিয়ে ধাক্কা খায়। মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে আরোহীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে হেলমেট মাথাকে বাঁচাতে সাহায্য করে, ইনজুরির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।”
তবে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া হেলমেটগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তায় যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সাইফুন নেওয়াজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা হেলমেট এমন হবে মোটামুটি একটা প্রাইভেটকারের চাকা ওপর দিয়ে চলে গেলেও কিছু হবে না।
“কিন্তু বিভিন্ন রাইড শেয়ারিংয়ের লোগো দেওয়া হেলমেটগুলো দেখলাম খুবই পাতলা। এটা তো জাস্ট শো। এই হেলমেট কোনো লোডই নিতে পারবে না।
“যদি কোথাও ধাক্কা খায় সেটা ভেঙে যাবে, ভেঙে গিয়ে ভাঙা অংশ যাত্রীর মাথায় ঢুকে যেতে পারে। এটা ঝুঁকিপূর্ণ, মানসম্মত নয়, এগুলো ইমার্জেন্সিতে কোনো কাজ করবে না।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা হেলমেট হিসেবে যেটা দেয় সেটা তো হেলমেট না, এটা তো একটা খেলনা। এ নিয়ে আমরাও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি। এটাতো কোনোভাবেই একজন যাত্রীর সুরক্ষা দিতে পারবে না।
“এটা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা তাদের জরিমানাও করেছি। তবে এখনও আমরা পুরোপুরি কঠোর হইনি। আমরা বিষয়টি আরেকটু দেখব। রাইড শেয়ারিং যারা করছে তাদের সঙ্গে আমরা এ নিয়ে খুব দ্রুতই বসব।”
পাশের দেশ ভারতে মোটরসাইকেল আরোহীদের আইএসআই মানের হেলমেট পরতে হয়। ইউরোপীয় দেশগুলোয় ‘ইসিই’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডট’ মানের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক।
মোটরযান আইনে যাত্রীদের জন্য হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক হলেও সেটার মান কী হবে তা নিয়ে আইনে কিছু বলা নেই।
বিআরটিএর পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এগুলোর মান কী হবে, তা নির্ধারণ করা জরুরি ।
“মোটরসাইকেল চালানোর সময় চালক এবং যাত্রী দুজনই হেলমেট পরবেন এটা আমাদের আইনেই বাধ্যতামূলক। বলা আছে, কেন হেলমেট পরতে হবে, এটা পরলে কী উপকার হবে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড কী হবে, হেলমেটের কোয়ালিটি কী হবে সেটা আমাদের আইনে নির্ধারণ করা নাই। এটার মান নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রয়োজন আছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠানো তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের হেলমেটগুলো বেশ ভালো মানের। আমরা যেখান থেকে হেলমেটগুলো আনি তারা এগুলোকে ভেরিফাইড গুড কোয়ালিটির হেলমেট বলছে।
“ওগুলো আমরা যাচাই করেই এনেছি। বিশেষ করে রাইডারদের হেলমেটগুলো ফুল প্রটেকশন দেওয়া। প্যাসেঞ্জার হেলমেটগুলো হাফ হেলমেট, কিন্তু সেগুলোও ভালো মানের।”
উবারও দাবি করেছে, তাদের সরবরাহ করা হেলমেটগুলোও মানসম্মত।
“যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের হেলমেটগুলোই সবচেয়ে ভালো মানের।”
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের কাছ থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সহজ ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা এম কাদেরের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া মেলেনি।