গাজীপুর সিটি করপেরেশন নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে মেয়র পদে ৯০ শতাংশের বেশি এবং ২৪টি কেন্দ্রে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
Published : 28 Jun 2018, 11:18 AM
খুলনায় নির্বিকার ইসি আগামীতে ‘ত্রুটি’ ঘোচাতে চায়
আর একটি কেন্দ্রে সর্বনিম্ন ২৫.৮৪ শতাংশ ভোটে পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটের হিসাব পর্যালোচনায়।
ইসি বলছে, এবার দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে মেয়র পদে গড়ে ৫৮ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে নির্দলীয় প্রতীকে ভোটের হার ছিল ৬৮ শতাংশ।
গত মে মাসে খুলনা সিটি নির্বাচনেও ২৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে মেয়র পদে ৯১.৩৮ শতাংশ, ৯৭.৬০ শতাংশ ও ৯৯.৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ নিয়ে সমালোচনা হলে কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়।
নির্বাচন কমিশন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিজয়ী প্রার্থীর দাবি অনুযায়ী, গাজীপুরে ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর।
অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, অনিয়ম আর জাল ভোটের ‘উৎসব’ হয়েছে গাজীপুরে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, “ইসি অনিয়ম বরদাশ করেনি। নয়টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে। বাকি ৪১৬টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।”
ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি ও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলও।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দুয়েকটি কেন্দ্রে ৯০% এর উপরে ভোট পড়তেই পারে। এটা অস্বাভাবিক না। স্থানীয় নির্বাচনে এমন হতে পারে; বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হলে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়ে যায়।”
একটি কেন্দ্রে সর্বনিম্ন ২৫.৮৪ শতাংশ ভোট পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “গড়ে ভোটার উপস্থিতি আহামরি কম নয় কিন্তু। এ সিটির ৬০ শতাংশ এলাকা শিল্প এলাকা। রোজার পরে ভাসমান ভোটার ও কর্মজীবীদের অনুপস্থিতির কারণে হয়ত ভোটের হার অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে।”
ইভিএমে ভোট নেওয়া ছয় কেন্দ্রে গড়ে ৫০% ভোট পড়ার বিষয়ে রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, “ওই সব কেন্দ্রে হয়ত ভোটাররা কম কেন্দ্রে গেছেন। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রার্থী ও ভোটারেরও ভূমিকা রাখতে হবে।”
ফল বিশ্লেষণ
রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত গাজীপুরের ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। ৮০% এর ওপরে রয়েছে ২৪টি কেন্দ্র।
১৮টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৪০% এর নিচে। বাকিগুলোয় ভোটর হার ৪০% থেকে ৭০% এর মধ্যে।
>> সর্বোচ্চ ৯৪.০৭ % ভোট পড়েছে বসুরা মক্তব মাদ্রাসা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ৩১১৯ জন।
>> সর্বনিম্ন ২৫.৮৪% ভোট পড়েছে ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার ছিলেন ৩২০১ জন।
৮০ শতাংশের বেশি ভোট: কোনাবাড়ী এম এ কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-২ কেন্দ্রে ৮৫%, গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২.৮১%, ধুমকেতু প্রিক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল-১ কেন্দ্রে ৮০.১৩%, শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়-১ কেন্দ্রে ৮৩%, গোপালপুর কিশোর বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে ৮১.২৭%, নন্দীবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮০.৬৭%, বিন্দান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯.৪৬%, বাড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২.৮১%, উধুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৩.৮১%, পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৯.৫৩%, মেঘডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৬%, ইছালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৭.০৮%, শুকুন্দিবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৩.৮৫%, বসুরা মক্তব মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৯৪.০৭%, ইছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৬.৩৭%, খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ কেন্দ্রে ৮১.৫৮%, খাইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে ৮১.৭৪%, ল্যাঙ্গুয়েজ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২.২৪%, হাতিমারা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ-২ কেন্দ্রে ৮৩.২৮%, মজলিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৪.৯৯%, মীরেরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৪.৪৬%, খালিসাবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৮.৫৮%, বিপ্রবর্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯০.২০% এবং রোভার পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮৫.৭৪%।
৪০ শতাংশের কম ভোট: পাগাড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩২.৭৫%, টঙ্গী সানরাইজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩১.৯৬%, বিকাশ স্কুল কেন্দ্রে ২৮.৩১%, সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-১ কেন্দ্রে ৩০.৩১%, সারদাগঞ্জ মেরিগোল্ড হাইস্কুল-২ কেন্দ্রে ৩৯.৮৫%, আমানউল্লাহ অ্যাকাডেমি কেন্দ্রে ৩৬.৪৫%, কোনাবাড়ি এম এ কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ-৪ কেন্দ্রে ৩৮.৭৪%, কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ-১ কেন্দ্রে ৩৮.৮৫%, পানিশাইল উচ্চ বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে ৩৫.৫৯%, শহীদ বৃত্তি একাডেমি-২ কেন্দ্রে ৩২.২৪%, ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে ২৫.৮৪%, পশ্চিম জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ কেন্দ্রে ৩৬.৫১%, মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা-৪ কেন্দ্রে ৩৪.০১%, গাজীপুর হোসাইনিয়া মাদ্রাসা-২ কেন্দ্রে ৩১.৯৫%, আব্দুর রহমান মেমোরিয়াল স্কুল কেন্দ্রে ৩৩.৭৯%, অনন্ত মডেল কিন্ডারগার্টেন কেন্দ্রে ৩৮.৬০%, হাজী আহমদ আলী পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে ৩৯.৮৯%।
তদন্ত চান পর্যবেক্ষকরা
পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাজীপুরে দিনের প্রথম ভাগে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিতে স্বতস্ফূর্ততা ছিল। কিন্তু বিকালে কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম চোখে পড়েছে।”
“গড়ে ৫৮% ভোট পড়েছে যেখানে, সেখানে দুটি কেন্দ্রে ৯০% এর বেশি ভোট পড়া মোটেই স্বাভাবিক না। কমিশন বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখতে পারে। এতে ভোটার ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পাবে মানুষ।”
গাজীপুরের ভোটের পর আরও তিন সিটি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিশনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন ইডব্লিউজি পরিচালক।
আব্দুল আলীম বলেন, “ভোটার, প্রার্থী ও দলের কাছে আস্থা বাড়তে কমিশনকে আরও প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে। গাজীপুরে দেখেছি-বিএনপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোটের আগের দিন বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তা না করার নির্দেশ দেওয়া হয় এসপিকে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কাজগুলো করলে ভোটের পরিবেশ তৈরিতে আরও সহায়ক ভূমিকা থাকে।”