নিবন্ধন: দলের কমিটি ও অফিসের খোঁজে মাঠে নামছে ইসি

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নির্বাচিত কমিটি-অফিস, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণে নির্বাচন, ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব, পেশাজীবী-সহযোগী সংগঠনের সম্পৃক্ততা এবং তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2017, 04:42 AM
Updated : 2 Nov 2017, 04:42 AM

নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী এসব বিষয় বাস্তবায়নে কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৪০টি নিবন্ধিত দলকে বুধবার চিঠি দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

দলগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে এসব তথ্য ইসিতে জানাতে বলা হয়েছে। শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়েও চিঠিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।  

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শর্তপূরণ করেই দলগুলো নিবন্ধিত হয়েছিল। আরও বেশ কিছু বিষয় প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে তাদের। এজন্য আমরা সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছি।”

দলগুলোর জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।  

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচিত কমিটি ও মাঠ অফিসের কার্যক্রমের তথ্য যাচাইয়ে একটি ‘বিশেষ দল’ তদন্তে নামবে। শর্ত পূরণ না হয়ে থাকলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দলকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দেওয়া হবে।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালুর পর এ পর্যন্ত মোট ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদলত অবৈধ ঘোষণা করে।

ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে- নিবন্ধিত দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায় নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত পালনে দলগুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে সব নিবন্ধিত দল একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

ইসির যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) মো. আবুল কাসেমের স্বাক্ষরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিবের বরাবরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত শর্তে দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর কোনো বিধান লঙ্ঘন হলে দলের নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে।

নিবন্ধন ও প্রতিপালন শর্ত

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।

১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলটির অন্তত একজন যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন;

২. যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী যদি অংশ নেওয়া আসনগুলোতে বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৫ শতাংশ পায়।

৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।

** নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে শেষ শর্তটিই পূরণ করতে হয়।

আরপিও অনুযায়ী এ শর্ত পূরণের পর নিবন্ধন পাওয়া গেলেও তা টিকিয়ে রাখতে আরও কিছু শর্ত প্রতিপালন করতে হয়।

>> দলের কেন্দ্রীয়সহ সব স্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে।

>> ২০২০ সালের মধ্যে সব কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

>> ছাত্র-শিক্ষকসহ পেশাজীবী কোনো সহযোগী সংগঠন থাকবে না।

>> ওয়ার্ড-থানা-উপজেলা ও জেলা কমিটির মতামত নিয়ে কেন্দ্রীয় বোর্ডের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দলগুলো প্রাথমিক শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন নিলেও পরে অনেক দলের অফিসই খুঁজে পাওয়া যায় না।

আবার কোনো দল হয়ত স্বাধীনতার পর একজন সাংসদ পেয়েই স্থায়ীভাবে নিবন্ধিত হয়েছে, কিন্তু পরে আর ভোটে অংশ নিচ্ছে না বা প্রত্যাশিত ভোটও পাচ্ছে না।

নিবন্ধিত অনেক দলের ভেতরেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই। নির্বাচন ছাড়াই অনেক দলের কমিটি হচ্ছে। কিছু দল প্রার্থী বাছাই, নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দলের বিধিও অনুসরণ করে না। মূল দলের সঙ্গে ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা কাউন্সিলর এলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

“ইসির সংলাপে আমরা নিবন্ধন প্রক্রিয়ার এসব দুর্বলতা নিয়ে কথা বলেছি। অন্তত পাঁচ বছর পর পর দলগুলোর নিবন্ধন পর্যালোচনার দরকার রয়েছে। এতে করে দলের ভেতরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। শর্ত প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখায় এই উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক।”

ইসির সংলাপে অনেক দলই আরপিও থেকে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অনেক দল আবার গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে সংবিধান ও আইন পরিপন্থি দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে।