২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা তখনকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর কর্মকর্তাদের গোচরেই হয়েছিল দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে, হামলাকারীদের আড়াল করতে তখন তদন্তের নামে ‘নাটক’ হয়েছিল।
Published : 30 Oct 2017, 06:07 PM
জজ মিয়াকে বাড়ি দেওয়ার ‘লোভও দেখানো হয়’
২১ অগাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু
সোমবার আলোচিত এই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি রেজাউর রহমান এই দাবি করেন।
১৫ বছর আগের এই মামলাটিতে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের পর আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় হবে।
শুনানিতে সৈয়দ রেজাউর বলেন, “আসামি পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্তের নামে নাটক করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত না করে প্রকৃত হামলাকারীদের পরিচয় আড়াল করার জন্য মিথ্যা কাহিনীর অবতারণা করে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই হামলার পর তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে। জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরেকে গ্রেনেড হামলাকারী সাজিয়ে আসামি করার বিষয়টিও পরে উদ্ঘাটিত হয়।
মামলার প্রথম দিককার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন ও আব্দুর রশীদ এখন মামলার আসামি। ওই আমলের তিন পুলিশ প্রধান মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীও এই মামলায় এখন বিচারের মুখোমুখি।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও এই মামলার আসামি এখন। অধিকতর তদন্তে তার সঙ্গে আসামির তালিকায় যোগ হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও।
আগের দিনের শুনানিতে রেজাউর রহমান বলেছিলেন, “গ্রেনেড হামলার আগে হাওয়া ভবনে তারেক রহমান জঙ্গি নেতা ও অন্য আসামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে হামলাকারীদের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক রহমান।”
সোমবারের শুনানিতে তিনি বলেন, “ঘটনার সময়ে পুলিশের বিভাগের ও নিরাপত্তা সংস্থার বড় কর্তা আসামি আশরাফুল হুদা, আব্দুর রহিম, রেজ্জাকুল হায়দারের মধ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশে, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ঘটনার দায় থেকে পালানোর জন্য।
“যেদিন এ ঘটনা ঘটবে সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসককে ইচ্ছাকৃতভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।”
পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়কে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে টানা চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানি করলেন সৈয়দ রেজাউর। তিনি তার যুক্তি উপস্থাপনে ছয়দিন সময় নেবেন বলে আগে জানিয়েছিলেন।
বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।
সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ামাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্ত হয়। এতে আসামির তালিকায় যোগ হন তারেক রহমানসহ ৩০ জন।
৫২ জন আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান এবং জামায়াত নেতা ও তৎকালীন মন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
বাকি ৫০ আসামির মধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধানরাসহ আটজন জামিনে রয়েছেন। পলাতক আছেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ আসামি। কারাগারে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বাকিরা।
হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলা দুটির বিচার একসঙ্গে চলছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার পর কারাবন্দি ২৩ এবং জামিনে থাকা আট আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন ও সাফাই সাক্ষ্য শেষে গত ২৩ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তি তর্ক শুনানি।