২১ অগাস্ট হামলার ছক হাওয়া ভবনে তারেককে নিয়ে: রাষ্ট্রপক্ষ

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় খালেদা জিয়ার ছেলের ‘সম্পৃক্ততা’ তুলে ধরতে গিয়ে ‘হাওয়া ভবনে হামলাকারীদের নিয়ে তারেক রহমানের বৈঠকের’ কথা রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে আদালতে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2017, 04:59 PM
Updated : 30 Oct 2017, 12:46 PM

২১ অগাস্টের হামলার আলোচিত মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে বক্তব্যে বুধবার আসামি তারেকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান।

তিনি বলেন, “২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে গ্রেনেড হামলার আগে হাওয়া ভবনে তারেক রহমান জঙ্গি নেতা ও অপর আসামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে হামলাকারীদের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক রহমান।”

২০০৪ সালে যখন শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দলীয় ব্যক্তিগত কার্যালয় হাওয়া ভবনে বসে ছেলে তারেক তখন ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সমাবেশে ওই হামলার তদন্ত তখন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে।    

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর মামলার অধিকতর তদন্তে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের নাম আসামির তালিকায় যোগ হয়।

যুক্তরাজ্যে থাকা তারেককে পলাতক দেখিয়ে তার বিচার চলছে।  বিএনপি বলে আসছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আগের ২২ আসামির সঙ্গে নতুন যোগ হওয়া ৩০ আসামির মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর আরও বলেন, “হাওয়া ভবনের সহযোগিতায় মাওলানা মো. তাজউদ্দিন এবং মুফতি আব্দুল হান্নান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেন।

যুক্তিতর্ক শুনানি শুরুর প্রথম দিনের আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সৈয়দ রেজাউর রহমান

“হামলার পর কারাগারে আর্জেস গ্রেনেড পাওয়া গেলেও তখন ওই গ্রেনেড ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল আলামত গায়েবের জন্য।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে যে তিনজন সিআইডি কর্মকর্তা এই মামলার তদন্ত করেছিলেন, তারা তিনজন মুন্সী আতিকুর রহমান, রুহুল আমিন ও আব্দুর রশীদ এখন মামলার আসামি। ওই আমলের তিন পুলিশ প্রধান মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীও এই মামলায় বিচারের মুখোমুখি।

আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী হত্যার এই মামলাটিতে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় বিচার।

রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার পর কারাবন্দি ২৩ এবং জামিনে থাকা আট আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন ও সাফাই সাক্ষ্য শেষে গত ২৩ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তি তর্ক শুনানি।

বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানি করেন সৈয়দ রেজাউর।

তিনি আগের দিন শুনানিতে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের উপর আঘাত হানতেই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সব শক্তি এক হয়ে ২১ আগস্টের হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত ছিল।

সৈয়দ রেজাউর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার যুক্তিতর্ক চলবে ছয় দিন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি করবেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তারপর আসবে আসামি পক্ষের পালা।

বুধবারের শুনানি শেষে বিচারক শাহেদ নূরুউদ্দিন আগামী ৩০ ও ৩১ অক্টোবর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া।