২১ অগাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু

গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটিতে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে; রায়ের আগে শুনানিতে এটাই শেষ ধাপ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2017, 12:23 PM
Updated : 23 Oct 2017, 12:31 PM

২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার এই মামলা নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন বিচারের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সোমবার পুরান ঢাকায় নাজিমুদ্দিন সড়কে কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার টাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়।

এই মামলাটিসহ ঢাকার আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার চলছে এই স্থানটিতে।

যুক্তিতর্ক শুনানির সূচনা বক্তব্যে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র থেকে ২০০৪ সালে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।

সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কের মূল শুনানি শুরু করবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, “কোন আসামির বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী কী কী বলেছে, তা উল্লেখ করে মামলা প্রমাণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হবে। এছাড়া উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, ইতিহাসের আলোচিত গ্রেনেড ও বোমা হামলা ও হত্যার ঘটনার মামলার উদাহরণ তুলে ধরা হবে।”

ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। দুটি মামলার বিচার একসঙ্গে চলছে।

গত ১১ অক্টোবর আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য সোমবার দিন নির্ধারিত হয়েছিল।

এর আগে জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি হয়। তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন।

২১ অগাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে সোমবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে

খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার প্রথম দিককার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সুপার রুহুল আমিন, মুন্সি আতিকুর রহমান ও আব্দুর রশীদ এবং সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক বিএনপি এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ শুনানির সুযোগ পাননি।

মোট ৫২ আসামির মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান এবং সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল।

হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।

সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি এবং বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মোট দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।

দুই মামলায়ই জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। 

২২ আসামির বিচার শুরুর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।

সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় তারেকসহ আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ তারিখে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। লন্ডনে থাকা তারেককে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগ গঠন হয়।