‘জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে জঙ্গিরা মিলে’ ২১ অগাস্টের হামলা

আওয়ামী লীগের উপর আঘাত হানতেই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সব শক্তি এক হয়ে ২১ অগাস্টের হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে মামলার শুনানিতে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2017, 01:01 PM
Updated : 24 Oct 2017, 01:01 PM

মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুনানির দ্বিতীয় দিনে এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান আরও বলেন, শেখ হাসিনার সমাবেশে ওই হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত ছিল।

১৩ বছর আগের ওই হামলার ঘটনায় করা মামলাটি নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিচারের শেষ পর্যায়ে এখন। সোমবার শুরু হয় যুক্তিতর্ক; এই শুনানি শেষ হলেই রায়ের দিন ঠিক হবে।

সৈয়দ রেজাউর বলেন, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয় ‘তথাকথিত সাম্প্রদায়িক ও সমমনা রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামাত-বিএনপি নেতুত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট’।

“দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন বিশেষ করে লস্কর-ই তৈয়বা, তেহেরিক-ই জিহাদী ইসলামী এবং হিযবুল মুজাহিদিন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই একত্রিত হয়ে ২১ অগাস্টে এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।”

যুক্তিতর্ক শুনানি শুরুর প্রথম দিনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সৈয়দ রেজাউর রহমান (ফাইল ছবি)

আফগান যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুফতি হান্নানসহ অন্যন্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে এই অপরাধ সংগঠন করে বলে দাবি করেন সৈয়দ রেজাউর।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সমাবেশে এই গ্রেনেড হামলায় দলীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই হামলার পর তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার বিষয়টি পরে তদন্তে উঠে আসে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তাতে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, জঙ্গি নেতা মো. তাজউদ্দিন, তার ভাই সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন।

নতুন করে আসামি হন জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, ঘটনার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।

শুনানিতে সৈয়দ রেজাউর বলেন, “তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে পাকিস্তানের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা মাওলানা তাজউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তারা সবাই মিলে হামলার পরিকল্পনা করেন।”

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিশেষ এজলাসে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আসামিদের শাস্তির জন্য যুক্তি উপস্থাপন করেন রেজাউর রহমান। এরপর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ রেজাউর জানান, তার যুক্তিতর্ক চলবে ছয়দিন।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূইয়া জানান, সৈয়দ রেজাউর রহমানের পর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি করবেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।