‘মানবিক কারণেই’ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে সরানো হচ্ছে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।
Published : 01 Feb 2017, 06:30 PM
‘ভোটার হতে রোহিঙ্গাদের সন্তানরাও তৎপর’
রোহিঙ্গাদের বিয়ে পড়ালে কাজীর শাস্তি
রোহিঙ্গা নিয়ে ঢাকার বক্তব্য মেনে নিয়েছে আনান কমিশন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘বাস্তবতা বিবেচনায়’ নীতিগত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগে হাতিয়ায় তারা (রোহিঙ্গারা) আরও ভালোভাবে থাকতে পারবেন।”
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের এই মুসলিম নাগরিকরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে শরণার্থী শিবিরগুলোতে রয়েছেন।
সেখানে ৩০ হাজারের মতো শরণার্থী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও রয়েছেন তিন লাখের মতো। শরণার্থী শিবিরের বাইরেও রয়েছেন আরও রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ বলে একদিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
শরণার্থী এই রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক এই শরণার্থীকে অন্তরায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
শাহরিয়ার বলেন, শরণার্থী শিবির এবং তার বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের সার্বিক পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই তাদের সরিয়ে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“তাদের সরিয়ে নিতে সময় লাগবে। নতুন স্থানে তাদের আবাস গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
বর্তমানে কক্সবাজারে যেখানে রোহিঙ্গারা থাকছেন, সেখানে তাদের চিকিৎসাসহ মানবিক অন্যসব সুবিধার বন্দোবস্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
“সেখানকার পরিস্থিতি যে খারাপ, সেটা যে কেউ দেখলেই বুঝবে। তিনজন থাকতে পারে যে ঘরে, সেখানে থাকছে ১০ জন।”
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে তিন দশক আগে থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছায়।
নিপীড়িত রোহিঙ্গারা ২০১২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে তখন বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত আটকে দেয়। এরপর গত অক্টোবরে আবার রাখাইনে সঙ্কট দেখা দিলে রোহিঙ্গারা ফের বাংলাদেশমুখী হলেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সীমান্তে পাহারা কড়া করলেও গত কয়েক মাসে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা্ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে; এক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনার কথাও জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
এই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো হলেও তাতে মিয়ানমার সাড়া দিচ্ছে না। মঙ্গলবার মিয়ানমার সরকার গঠিত একটি কমিশনের কাছেও একই আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতের পাশাপাশি এই শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার জন্য চারটি কমিটি করেছে সরকার।
এই তথ্য জানিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশেও রোহিঙ্গাদের হাতিয়া দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
এই পদক্ষেপের বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে, “এদের (রোহিঙ্গা) মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে গেছে।
রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতে একটি ডেটা বেইস তিন মাসের মধ্যে করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তা হওয়ার পর কাজটি সহজ হয়ে যাবে।
রোহিঙ্গাদের নতুন ঠিকানায় আবাস সরকারের উদ্যোগে করা হচ্ছে বলে জানান শাহরিয়ার। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা সহায়তায় আগ্রহী বলে জানান তিনি।